Follow palashbiswaskl on Twitter

PalahBiswas On Unique Identity No1.mpg

Unique Identity Number2

Please send the LINK to your Addresslist and send me every update, event, development,documents and FEEDBACK . just mail to palashbiswaskl@gmail.com

Website templates

Zia clarifies his timing of declaration of independence

What Mujib Said

Jyoti Basu is dead

Dr.BR Ambedkar

Memories of Another day

Memories of Another day
While my Parents Pulin babu and Basanti Devi were living

Saturday, May 4, 2013

ভয়-হতাশায় রাজ্যে আত্মহত্যা বেড়ে ১০!মুখ্যমন্ত্রীর কি মিথ্যা বলছেন? কুণাল-মদনরা চোর, আর ওরা সাধু?:মমতা, রকারের হলফনামায় ইঙ্গিত সেই দিকেই!এবার প্রতারণার অভিযোগ ভুইফোঁড় সুরাহা মাইক্রোফিনান্সের বিরুদ্ধে!কংগ্রেসের সভায় মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি!রাজনৈতিক তহবিলে টাকা ঢালতেন সুদীপ্ত!সারদা দুর্নীতির তথ্য জানত অর্থ দফতর- বিশেষ রিপোর্ট,সারদাকাণ্ডে বহিষ্কার অসীম দাশগুপ্তর আপ্তসহায়ক!ফের আরও এক ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে নাম জড়াল শতাব্দী রায়ের!গণেশকে বলির পাঁঠা করে কি বাকি নেতাদের ছাড়েরই ব্যবস্থা সিপিএমে!সিবিআই তদন্তে ভয় কেন,প্রশ্ন সেলিমের!ক্ষতিপূরণ নিয়ে সংশয় হলফনামা!অভিষেকের ‘অভিষেক’ ঘিরে তৃণমূলে তোলপাড়, বিস্ফোরক মুখ্যমন্ত্রীর ভাইও!কপর্দকশূন্য সুদীপ্ত গৌরী সেনের খোঁজে!

ভয়-হতাশায় রাজ্যে আত্মহত্যা বেড়ে ১০!মুখ্যমন্ত্রীর কি মিথ্যা বলছেন? কুণাল-মদনরা চোর, আর ওরা সাধু?:মমতা, রকারের হলফনামায় ইঙ্গিত সেই দিকেই!এবার প্রতারণার অভিযোগ ভুইফোঁড় সুরাহা মাইক্রোফিনান্সের বিরুদ্ধে!কংগ্রেসের সভায় মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি!রাজনৈতিক তহবিলে টাকা ঢালতেন সুদীপ্ত!সারদা দুর্নীতির তথ্য জানত অর্থ দফতর- বিশেষ রিপোর্ট,সারদাকাণ্ডে বহিষ্কার অসীম দাশগুপ্তর আপ্তসহায়ক!ফের আরও এক ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে নাম জড়াল শতাব্দী রায়ের!গণেশকে বলির পাঁঠা করে কি বাকি নেতাদের ছাড়েরই ব্যবস্থা সিপিএমে!সিবিআই তদন্তে ভয় কেন,প্রশ্ন সেলিমের!ক্ষতিপূরণ নিয়ে সংশয় হলফনামা!অভিষেকের 'অভিষেক' ঘিরে তৃণমূলে তোলপাড়, বিস্ফোরক মুখ্যমন্ত্রীর ভাইও!কপর্দকশূন্য সুদীপ্ত গৌরী সেনের খোঁজে!

অভিযুক্তদের পাশেই দল, বার্তা মমতার

এই সময়: সারদা কেলেঙ্কারিতে দলের শীর্ষ নেতাদের একাংশের নাম জড়ালেও তাঁদের বিরুদ্ধে এখনই কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ অন্তত শুক্রবার ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে৷ সারদা কেলেঙ্কারিতে কুণাল ঘোষ, সৃঞ্জয় বসুর মতো সাংসদের নাম জড়ালেও এ দিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন৷ বরং রাজ্য জুড়ে ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থার বাড়বাড়ন্তের দায় বাম জমানার উপর চাপিয়েই ক্ষান্ত দিয়েছেন মমতা৷

সারদা কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর যে ভাবে দলের একের পর এক নেতা মন্ত্রীর নাম উঠে এসেছে তাতে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল তৃণমূলের অন্দরেই৷ এ দিনের বৈঠকে দলনেত্রীর সামনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাতে তত্পর হয়েছিলেন দলীয় নেতাদের একাংশ৷ কিন্ত্ত বহু প্রতীক্ষিত ওই বৈঠকে দলের অভিযুক্ত নেতাদের আড়াল করে আক্রমণের অভিমুখ সিপিএমের দিকেই ঘুরিয়ে দেন মমতা৷ নাম না করে সিপিএমকে তাঁর হুঁশিয়ারি, 'কুণাল চোর, টুম্পাই চোর, আমি চোর, মুকুল চোর! আর তোমরা সব সাধু? সব চোর ধরতে বেরিয়েছে! সব ফাইল বের করছি, সব কটাকে জেলে পুরব৷' সারদার মতো অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে দলীয় নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠতায় তৃণমূলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে মনে করছিলেন যে নেতারা, নেত্রীর এই মন্তব্যে তাঁরা হতাশ৷ এর ফলে পঞ্চায়েত ভোটের আগে কুণাল ঘোষ, সৃঞ্জয় বসু মদন মিত্রদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়ে দলের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টাও ধাক্কা খেল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷
এ দিনের বৈঠকে কুণালবাবু উপস্থিত না-থাকলেও নেত্রী নিজের থেকেই তাঁর নাম উচ্চারণ করেন৷ বরং দলের অন্দরে যাঁরা কুণালের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে তত্পর হয়েছিলেন বলে খবর, শুক্রবার তাঁদের উপেক্ষাই করেছেন শীর্ষনেত্রী৷ নিজেদের মধ্যে হাজার জল্পনা করলেও দলনেত্রীর সামনে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত নেতাদের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি করার দুঃসাহস দেখাতে পারেননি কেউ৷

সারদা কেলেঙ্কারির পর মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী কবুল করেছিলেন, সাংবাদিকদের সাংসদ করে রাজ্য সভায় পাঠানো ভুল হয়েছিল তাঁর৷ রাজনৈতিক মহলের অভিমত, দলনেত্রীর মুখ থেকে ওই বিবৃতি শোনার পর দলে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, কুণাল ঘোষ-সহ অন্যান্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন মমতা৷ কুণাল এ দিন বৈঠকে কেন অনুপস্থিত রইলেন তা নিয়ে দলের কেউ মন্তব্য করতে চাননি৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতার ধারণা, সারদা কেলেঙ্কারি রেশ কিছুটা স্তিমিত না-হওয়া পর্যন্ত তাঁকে দলীয় কর্মসূচিগুলি এড়িয়ে চলার অলিখিত নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী৷

বৃহস্পতিবার শ্যামবাজারের জনসভায় মমতা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কেবল বিরোধীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি দলের কোনও সাংসদ বা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবেন না৷ শুক্রবার দলের অন্দরে উপদলীয় কার্যকলাপ নিয়ে কিছু নেতাকে সতর্ক করলেও, যাঁদের বিরুদ্ধে বেআইনি লগ্নি সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তাঁদের উদ্দেশে কোনও মন্তব্যই করেননি দলনেত্রী৷ মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাব বুঝে তাঁর দলেরই বহু সাংসদ বিধায়কের মনে হয়েছে, অর্থলগ্নি কেলেঙ্কারির বিষয়টিকে দলের অন্দরে 'ক্লোজড চ্যাপ্টার' হিসেবেই দেখতে চান নিনি৷ দলের ভিতরে পরনিন্দা পরচর্চা বন্ধ করতে মমতার নির্দেশ, 'কে কার বিরুদ্ধে কথা লাগাচ্ছেন, আমার কাছে সব খবর আছে৷ এই সব করলে আমি তাড়িয়ে দিতে বাধ্য হবো৷'

এই প্রসঙ্গেই সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বিধায়ক শিউলি সাহার গণ্ডগোলের প্রসঙ্গ টেনে আনেন মমতা৷ আবার দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির প্রকৃত ক্ষমতা নিয়ে দোলা সেন এবং শোভনদেব চ‌ট্টোপাধ্যায়ের লড়াইয়ের কথাও উল্লেখ করেন তিনি৷ তমলুকের সাংসদ শুভেন্দুর সঙ্গে হলদিয়ার বিধায়ক শিউলির দ্বন্দ্বের পিছনে দলেরই গুরুত্বপূর্ণ অংশের হাত আছে বলে মনে করেন নেত্রী নিজেই৷ এ দিন এই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, 'শুভেন্দুর সঙ্গে শিউলির গণ্ডগোল হল৷ শিউলি প্রেসের কাছে চলে গেল৷ শিউলিকে যারা তাতিয়েছিল তারা কিন্ত্ত পরে ওর পাশে থাকবে না৷'

মুখ্যমন্ত্রীর এহেন মন্তব্য যদি শুভেন্দুর পক্ষে স্বস্তির খবর হয়, তা হলে এই বৈঠকেই বক্তা তালিকা থেকে বাদ পড়া অস্বস্তি বাড়িয়েছে তাঁর৷ তৃণমূলে যাঁরা সুবক্তা, শুভেন্দু তাঁদের অন্যতম বলে মনে করে দল৷ অথচ শুক্রবারের বৈঠকে এই মুকুল রায়, সুব্রত বক্সি, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পার্থ চ‌ট্টোপাধ্যায়, অমিত মিত্ররা বক্তৃতা দিলেও, সুযোগ পাননি শুভেন্দু৷ এই ঘটনা দেখে দলেই জল্পনা ছড়িয়েছে কুণালবাবুদের বিরুদ্ধে দলের অন্দরে সরব হওয়ায় অধিকারী পরিবারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জন্মেছে শীর্ষ নেত্রীর৷ স্থানীয় রাজনীতিতে ঘোর শুভেন্দু-বিরোধী বলে পরিচিত অখিল গিরি জ্যোর্তিময় করকে পূর্ব মেদিনীপুরের শুভেন্দুর সঙ্গে সাংঠনিক দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছেন দলনেত্রী৷ এই ঘটনাতেও বিস্ময় প্রকাশ করছেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা৷
সারদা কেলেঙ্কারির আঁচ কমাতে শ্যামবাজারে জনসভা করে সিপিএমের নেতা ও সংগঠনের বিরুদ্ধেও আক্রমণ শানিয়েছিলেন মমতা৷ এ বার তারই পাল্টা হিসেবে আগামী মঙ্গলবার ওই একই জায়গায় সভা করবে সিপিএমের কলকাতা জেলা কমিটি৷ সেই সভায় বক্তৃতা দেবেন গৌতম দেব৷

সম্প্রতি ভাইপো অভিষেকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে মমতাকে নিশানা করছেন সিপিএম নেতৃত্ব৷ কিন্ত্ত শুক্রবারের বৈঠকে মমতা বুঝিয়ে দেন, ভাইপোকে রাজনীতিতে নিয়ে এসে কোনও ভুল করেননি তিনি৷ তিনি বলেন, 'অভিষেক আমার ভাইপো হতেই পারে৷ পরিবারের লোকেরা না এলে রাজনীতির নতুন প্রজন্ম তৈরি হবে কী করে?'


সারদাকাণ্ডে যেসব তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছে সেই  কুণাল ঘোষ, সৃঞ্জয় বসু, মদন মিত্রদের পাশে দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ দলকে তাঁর বার্তা, বিরোধীদের তোলা অভিযোগকে গুরুত্ব না দিয়ে, পঞ্চায়েত ভোটকে পাখির চোখ করুন৷


সারদা-কাণ্ডে তৃণমূলের দু'ই সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছে৷ তা নিয়ে আক্রমেণ নেমেছে কংগ্রেস-সিপিএম৷ বিরোধীদের তোলা অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে সিঁটিয়ে না থেকে, পঞ্চায়েত ভোটকে পাখির চোখ করে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এদিন কার্যত, কুণাল ঘোষ-সৃঞ্জয় বসু-মদন মিত্রদের পাশেই দাঁড়ান তিনি৷ 
শুক্রবার ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে দলের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে বিরোধীদের কটাক্ষ করে মমতা বলেন, কুণাল, সৃঞ্জয়, মুকুল, মদন সবাই চোর, আর ওরা সাধু? চোরের মায়ের বড় গলা৷ চুরি করার ঠাকুরদারা সব বসে আছে৷ তদন্ত করে ফাইল বের করছি৷ সব জেলে পুরব৷ 
এদিনের বৈঠকে কুণাল ঘোষ উপস্থিত ছিলেন না৷ তবে, উপস্থিত ছিলেন সৃঞ্জয় বসু৷ সিপিএমের উদ্দেশে হুমকির পাশাপাশি অন্যায় করলে তাঁর নিজের দল কিংবা পরিবারের কেউ যে রেয়াত পাবেন না, সেই বার্তাও দেন মমতা৷ তিনি বলেন,দলে বা পরিবারের মধ্যে কেউ অন্যায় করলে রেয়াত করিনি, করব না৷ তদন্তে যাঁরা দোষী প্রমাণিত হবে, সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷
যুক্তি-তর্ক বক্তব্য দিয়ে সিপিএমের বিরুদ্ধে প্রচারে নামার জন্যও দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁর বার্তা,সিপিএমের আক্রমণের বিরুদ্ধে পাল্টা রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে তুলুন৷ কারো গায়ে হাত দেবেন না৷ মানুষের দরবারে যুক্তি নিষ্ঠ বক্তব্য পেশ করুন, সব ঘরে ঢুকে যাবে৷ কেউ সিঁটিয়ে থাকবেন না৷ সিপিএমের গায়েও কালির ছিটে আছে৷  
বিরোধীদের আক্রমণের পাশাপাশি এদিন দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও বার্তা দেন তৃণমূল নেত্রী৷ শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, দোলা সেনদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব চলছে, তা যে তিনি মোটেও ভাল চোখে দেখছেন না, তা বুঝিয়ে দিয়ে মমতা বলেন, 
আইএনটিটিইউসি-তে এত সংগঠন কেন থাকবে? একটা বডি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে৷ তারপরও দ্বন্দ্ব কেন?শুভেন্দু অধিকারী-শিউলি সাহার মধ্যেও যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে, তা মেটাতে শিউলি সাহার উদ্দেশে তৃণমূল নেত্রীর পরামর্শ, শুভেন্দুর সঙ্গে কথা বলে কাজ করতে হবে৷ 
দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে প্রতিটি জেলায় একটি মনিটরিং কমিটিও গড়ে দেন তৃণমূল নেত্রী৷ ১৩ মে রাজ্যজুড়ে মা-মাটি দিবস পালন করার নির্দেশ দেন৷ একটি কেন্দ্রীয় সমাবেশ করার জন্য শুভেন্দু অধিকারীকে দায়িত্ব দেন তিনি৷ 
এদিনের বৈঠকে বক্তব্য পেশ করেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়৷
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ব্যাখ্যা, সারদাকাণ্ডে বিরোধী-আক্রমণের মুখে দলীয় কর্মীদের একাংশের মনোবলে চিড় ধরতে পারে, সেই আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে এদিন তাঁদের মনোবল চাঙ্গা করার চেষ্টা যেমন করলেন তৃণমূল নেত্রী, তেমনই পঞ্চায়েত ভোটেও দলকে ঐক্যবদ্ধ করার বার্তা দিয়ে, বিরোধীদের উদ্দেশেও হুঙ্কার ছাড়লেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷


ভয়-হতাশায় রাজ্যে আত্মহত্যা বেড়ে ১০
ভয়-হতাশায় রাজ্যে আত্মহত্যা বেড়ে ১০
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন আত্মগাতী আমানতকারী রঞ্জিতের পরিজন। -- অভিজ্ঞান নস্কর

এই সময়: সারদা কেলেঙ্কারির জেরে মানসিক অবসাদ কিংবা হতাশায় ভুগে আত্মঘাতীর তালিকা ক্রমশই লম্বা হচ্ছে৷ শুক্রবার আরও দু'জন আত্মঘাতী হন৷ সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত মোট দশজনের মৃত্যু হল৷ দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতায় একটি বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার কর্তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ৷ ওই জেলারই জয়নগরে সারদার এক আমানতকারীও এদিন সকালে নিজের বাড়িতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন৷

দক্ষিণ ২৪ পরগনার পৈলানের বাসিন্দা অজিত শীল (৬২) প্রায় সাতটি হোটেলের মালিক ছিলেন৷ দীঘা, রায়চক, মন্দারমণি, ফলতা, গোসাবা প্রভৃতি এলাকায় তাঁর অনেক হোটেল রয়েছে৷ আদতে অজিতবাবু ছিলেন ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসায়ী৷ ঠাকুরপুকুরেও তাঁর একটি বাড়ি আছে৷ পরে হোটেল ব্যবসা শুরু করেন৷ তাতে বেশ ভালোই আয় হচ্ছিল৷ বছর তিনেক আগে তিনি অপরূপা ভবিষ্য অ্যাগ্রো ইন্ডিয়া লিমিটেড এবং অপরূপা ভবিষ্য ক্যাপিট্যাল লিমিটেড নামে দুটি অর্থলগ্নি সংস্থা তৈরি করেন৷ পুলিশ জানিয়েছে, ফলতায় নিজের হোটেলেই (রাজহংস) এদিন সকালে তাঁর মৃতদেহ মিলেছে৷ ওই ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার পাওয়া গিয়েছে৷ তাতে লেখা ছিল, বছর তিনেক আগে সারদা গোষ্ঠীর কয়েক জন কর্তা তাঁকে অর্থলগ্নি সংস্থা খোলার পরামর্শ দেন৷ সেইমতো এই ব্যবসায় নেমে তিন বছরে বেশ কয়েক কোটি টাকা তোলেন ভিন রাজ্য থেকে৷ হোটেল এবং রিসর্ট বুকিংয়ের নামে মূলত এই টাকা তোলা হত৷ আমানতকারীদের প্রায় তিন কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার সময় হয়ে গিয়েছিল৷ সারদা-কাণ্ডের পর কোথা থেকে এত টাকা দেবেন, সেই চিন্তাই তাঁকে পেয়ে বসেছিল বলে বাড়ির লোকেরা জানিয়েছেন৷

পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত ন'টা নাগাদ অজিতবাবু তাঁর হোটেলে চেয়ারম্যানের জন্য চিহ্নিত ঘরে ঢোকেন৷ তিনি অর্থলগ্নি সংস্থার চেয়ারম্যান ছিলেন৷ গভীর রাত পর্যন্ত হোটেলে তাঁর সঙ্গে কয়েক জন কর্তার গোপন বৈঠক হয়৷ তার পর তাঁরা চলে যান৷ অজিতবাবু সবজি-রুটি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন৷ শুক্রবার সকাল ন'টাতেও ঘর বন্ধ দেখে হোটেলের কর্মীদের সন্দেহ হয়৷ তাঁরা ডাকাডাকি করেন৷ তাতেও সাড়া না পেয়ে তাঁরা ঘরের দরজা ভেঙে ফেলেন৷ তখনই তোয়ালে এবং গেঞ্জি পরা অজিতবাবুর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান কর্মীরা৷ তাঁরা ম্যানেজারকে খবর দেন, পুলিশেও খবর দেওয়া হয়৷ পুলিশ এসে সেটি ময়না তদন্তে পাঠায়৷ তাঁর হাতের কিছু শিরা কাটা ছিল৷ ঘরের অনেক জায়গায় রক্তের ছিটে ছিল৷ সুইসাইড নোটে তিনি লিখে যান, এই মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়৷ এতগুলি লোকের টাকা কী ভাবে ফেরত দেওয়া হবে, নোটে সে ব্যাপারেও তিনি উদ্বেগের কথা লিখে যান৷ ঘরে একটি কালো ব্যাগ পাওয়া গিয়েছে৷ তাতে দুই সংস্থার বহু কাগজপত্র এবং কয়েকশো টাকা ছিল৷

অজিতবাবুর ছেলে অনির্বাণ এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত৷ মেয়ে অনিন্দিতা একটি সংস্থার ডিরেক্টর৷ তাঁরা জানান, সংস্থা দুটি ভালোই চলছিল৷ বাবা টাকা ফেরত দেওয়াও শুরু করেছিলেন৷ কিন্ত্ত সারদা-কাণ্ডের পর বাবা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন৷ টাকা কী ভাবে ফেরত দেওয়া হবে, তা ভেবে পাচ্ছিলেন না৷ কিন্ত্ত তার জন্য যে তিনি আত্মঘাতী হবেন, তা বুঝতেও পারেননি তাঁরা৷ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, লোভই তাঁকে শেষ করে দিল৷ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পশ্চিম) অলোক রাজোরিয়া জানান, মৃতের ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোট মিলেছে৷ হোটেলের ম্যানেজার এবং কয়েক জন কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে৷

ওই জেলারই জয়নগরের ঠাকুরের চক গ্রামের যুবক রঞ্জিত প্রামাণিক (১৮) এদিন সকালে নিজের বাড়িতে গলায় নাইলনের দড়ি বেঁধে আত্মঘাতী হন৷ পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, তাঁর বাবা-মা নিরুদ্দেশ হওয়ার পর ছোট ভাই-বোনেদের নিয়ে সমস্যায় পড়েন তিনি৷ সংসার চালাতে তিনি রাজস্থানে চলে যান জরির কাজ করতে৷ কিন্ত্ত ভাই-বোনেদের কী হবে, তা চিন্তা করে বছর তিনেক আগে রঞ্জিত বাড়ি ফিরে আসেন৷ পাশের গ্রামের যুবক সারদা গোষ্ঠীর এজেন্ট অলোক সাঁপুইয়ের পরামর্শে তিনি অনেক কষ্টে জমানো তিন হাজার টাকা লগ্নি করেন সারদাতে৷ বৃহস্পতিবার গ্রামের চায়ের দোকানে গিয়ে সারদা গোষ্ঠীকে নিয়ে ঝামেলার কথা জানতে পারেন তিনি৷ রাতে বাড়ি ফিরে মনমরা হয়ে পড়েন৷ এদিন সকালে পাড়ার দোকান থেকে দড়ি কিনে এনে ঘরের দরজা বন্ধ করে ঝুলে পড়েন৷ ভাই চিরঞ্জিত্ বলছিল, দাদা চলে গেল৷ এবার আমাদের কী হবে৷

এদিকে এদিনই এটিএম গ্রুপ অফ কোম্পানির ঝাড়গ্রাম শাখার ম্যানেজার বিদ্যুত্ মাইতি, ক্যাশিয়ার সেখ দাউদ আলি এবং দুই কর্মী অর্ঘ্য নাগ ও রঞ্জিত দাসকে পুলিশ গ্রেন্তার করেছে৷ পেশায় ব্যবসায়ী পার্থসারথি সাউ নামে এক আমানতকারীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের ধরা হয়৷

দুর্গাপুরে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ অ্যাক্সেস সংস্থার বিরুদ্ধে থানায় এদিন আরও দুটি অভিযোগ জমা পড়েছে৷ এক বিধবা এবং এক ছোট ব্যবসায়ী জমি কেনার জন্য টাকা দিয়েও জমি পাননি৷ দুর্গাপুরের এসিপি এস সি মুরুগান সন্ধ্যায় এ খবর জানান৷



মুখ্যমন্ত্রী কি চিট ফান্ড কাণ্ডে কোনও সত্য আড়াল করতে চাইছেন? সন্দেহটা তৈরি হচ্ছে কারণ, মুখ্যমন্ত্রীর কথার সঙ্গে কোর্টে জমা দেওয়া তাঁর সরকারের হলফনামা মিলছে না। অন্যান্য নানা তথ্যও প্রমাণ করছে, পয়লা বৈশাখের অনেক আগেই সব জানত সরকার। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিনি কিছুই জানতেন না।

সারদা গোষ্ঠীর প্রাণঘাতী প্রতারণার কথা প্রকাশ্যে আসার সাত দিন পরে প্রথম বার সাংবাদিকদের সামনে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছিলেন, পয়লা বৈশাখ অর্থাত্ পনেরই এপ্রিলের আগে তিনি বিষয়টি জানতেনই না।  

দোসরা মে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে দলের সমাবেশেও একই দাবি করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। 

সেদিনই, অর্থাত্ দোসরা মে হাইকোর্টে রাজ্য সরকারের জমা দেওয়া হলফনামায় কিন্তু বলা হয়েছে,  দুহাজার এগারোর মে মাসে ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই  পদক্ষেপ নিতে শুরু করে সরকার।

প্রশ্ন উঠছে, মুখ্যমন্ত্রী কি জানতেন না তাঁর সরকারের এই পদক্ষেপের কথা? 

হাইকোর্টে সরকারের জমা দেওয়া হলফনামায় বলা হয়েছে, চিটফান্ড নিয়ন্ত্রণে বাম আমলের বিলে দ্রুত রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের জন্য দুহাজার এগারোর চোদ্দই জুলাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে চিঠি দেন রাজ্যের অর্থসচিব। দুহাজার বারোতেও ফের চিঠি দেওয়া হয়।

তবু মুখ্যমন্ত্রী কিছু জানতেন না? বাম আমলের বিল দুর্বল হলে, কেনই বা সেই বিলে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের জন্য কেন্দ্রকে জোড়া চিঠি দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার? 

রাজ্য সরকারের হলফনামায় বলা হয়েছে, গত বছর অক্টোবরে বেআইনি চিটফান্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অর্থসচিবকে নির্দেশ দেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব। হলফনামায় বলা হয়েছে, এরপর অর্থ দফতর তদন্ত শুরু করে বুঝতে পারে চিটফান্ড নিয়ন্ত্রণে বামেদের আনা বিল যথেষ্ট নয়।

এসব কিছুই কি হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখে? 

দুহাজার এগারোর অগাস্টে ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থাগুলির বেআইনি কাজ সম্পর্কে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে চিঠি দেন রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। ওই চিঠিতে ১৫টি সংস্থার নাম ছিল। ওই চিঠির জবাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানায়, কী ভাবে ওই সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে কীভাবে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।

তাঁর সরকারের মন্ত্রী জানতেন, কিন্তু জানতেন না মুখ্যমন্ত্রী? 

দুহাজার এগারো সালের ২৫ আগস্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকও চিট ফান্ডের দৌরাত্ম্য সম্পর্কে সতর্ক করে রাজ্য সরকারকে চিঠি দেয়। 

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দ্বিতীয় চিঠিটি আসে ২০১১-এর ২০ অক্টোবর। 

তৃতীয় ও চতুর্থ চিঠি আসে যথাক্রমে ২০১১-এর ১৬ ডিসেম্বর এবং ২০১১-এর ২৬ ফেব্রুয়ারি।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের চিঠিগুলি কি তবে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীকে দেখানো হয়নি? 

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিটি চিঠিতেই চিট ফান্ডের বেআইনি ব্যবসা রুখতে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা জানানো হয় রাজ্য সরকারকে। কিন্তু ওই চিঠিগুলির ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, আদৌ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা, তা কেন্দ্রকে কোনও বারই জানায়নি রাজ্য সরকার।

মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, তিনি চিট ফান্ডের প্রতারণার কথা জানতেন না। অর্থাত্ তিনি জানতেন না, ২০১১-এর মে মাস থেকে তাঁর সরকারের পদক্ষেপের কথা, 
জানতেন না বামেদের বিলে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের অনুরোধ করে তাঁর সরকারের চিঠি পাঠানোর কথা, জানতেন না রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে তাঁর সরকারের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের চিঠি চালাচালির কথা, জানতেন না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পাঠানো চারটি চিঠির কথা। 

মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু জানতেন, দুহাজার এগারোর এগারোই সেপ্টেম্বর সারদা গোষ্ঠীর নামে নালিশ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন গনিখান চৌধুরীর ভাই কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরি ওরফে ডালু। ওই চিঠি পুনর্বিবেচনা করার জন্য আবু হাসেমের ভাই আবু নাসের খান চৌধুরী ওরফে লেবু মারফত নাকি অনুরোধও করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। লেবুবাবু তো তেমনই জানিয়েছেন।

তাহলে কি কেঁচো খুঁড়তে কোনও কেউটে বেরিয়ে পড়ার আশঙ্কাতেই বারবার মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, পয়লা বৈশাখের আগে তিনি কিছুই জানতেন না? 

http://zeenews.india.com/bengali/kolkata/tmc-s-affidavit-rises-question-on-cm-s-transparency_13173.html


অভিষেকের 'অভিষেক' ঘিরে তৃণমূলে তোলপাড়, বিস্ফোরক মুখ্যমন্ত্রীর ভাইও


অভিষেকের 'অভিষেক' ঘিরে তৃণমূলে তোলপাড়, বিস্ফোরক মুখ্যমন্ত্রীর ভাইও
নববর্ষে এক র‌্যালিতে দেবাশিস কুমারের সঙ্গে কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়। -- কৌশিক রায়

তাপস প্রামাণিক

মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই কি শেষপর্যন্ত তৃণমূলের আগামী দিনের কান্ডারি হতে চলেছেন? এই প্রশ্ন ঘিরে তৃণমূলের অন্দরে এখন রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়েছে৷

বৃহস্পতিবার শ্যামবাজারে দলের সমাবেশ-মঞ্চে অভিষেকের 'বিশেষ' উপস্থিতি এবং দলের ভবিষ্যত্‍ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যই জল্পনা উসকে দিয়েছে৷ যা সারদা-বিতর্ককেও কখনও-সখনও ছাপিয়ে যাচ্ছে৷ তৃণমূলের ওই সমাবেশ-মঞ্চে দলের প্রথমসারির অনেক নেতারই জায়গা হয়নি৷ ব্যতিক্রম অভিষেক৷ দলের কোনও বড় পদে না থেকেও আগাগোড়াই মঞ্চের সামনের সারিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে৷ সেই মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী আবার দলের নেতা-কর্মীদের অভয় দিয়েছেন, 'আমাকে বা তৃণমূল কংগ্রেসকে শেষ করার চেষ্টা করে লাভ নেই৷ সিপিএমের মোকাবিলার জন্য ভবিষ্যত্ প্রজন্ম তৈরি করে রেখেছি৷'ভবিষ্যত্‍ প্রজন্ম বলতে মুখ্যমন্ত্রী কাকে বোঝাতে চেয়েছেন, তা নিয়েই দলের অন্দরে জল্পনা শুরু হয়েছে৷ দলের একাংশ মনে করছেন, 'ভবিষ্যত্‍ প্রজন্ম' বলতে মুখ্যমন্ত্রী হয়তো নিজের ভাইপোকেই ইঙ্গিত করেছেন৷

শ্যামবাজারের সভার ঠিক পরের দিন, শুক্রবার নির্বাচন কমিশন হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনের দিন ঘোষণা করতেই দলীয় প্রার্থী হিসাবে ফুটবলার প্রসূন ব্যন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা করেছেন তৃণমূল নেত্রী এবং দলীয় প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে দলের তরফে অন্যতম দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন সেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই৷ সারদা-বিতর্কের মধ্যে এই উপ-নির্বাচন তৃণমূলের কাছে এক প্রকার অগ্নি-পরীক্ষাই৷ সেই কঠিন লড়াইয়ের পরিচালনায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে এগিয়ে দেওয়ার মধ্যেও বিশেষ অর্থ খুঁজছেন তৃণমূলেরই অনেকে৷

শাসকদলের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বেআইনি আর্থিক-সংস্থা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিস্ফোরক মন্তব্য৷ একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে তাঁর দাবি, চিটফান্ডের বিপদ সম্পর্কে এক বছর আগেই তিনি দলকে সতর্ক করেছিলেন৷ কিন্ত্ত সে-কথায় গুরুত্ব দেওয়া হয়নি৷ এর ফলেই রাজ্যে এতবড় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে৷ কার্তিকবাবু 'বিবেক' নামে যে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, সেই সংস্থার মাসিক পত্রিকার সাম্প্রতিক সংস্করণেও চিটফান্ড ব্যবসা নিয়ে তির্যক মন্তব্য করা হয়েছে৷ 

তৃণমূলের অনেক নেতাই মনে করছেন, দলে অভিষেকের দ্রুত উত্থান মেনে নিতে পারছেন না কার্তিকবাবু৷ কারণ, তিনিও বহু বছর ধরে দলের কাজে যুক্ত৷ রেলকর্মী ইউনিয়ন-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দলের গণ-সংগঠনের দায়িত্বও সামলাচ্ছেন তিনি৷ তা সত্ত্বেও তাঁকে বাদ দিয়ে ভাইপোকে দলের নেতা হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী তুলে ধরায় চটেছেন কার্তিকবাবু৷ 

দিল্লির ম্যানেজমেন্ট কলেজ থেকে পাশ করা অভিষেক পরিবারের আর পাঁচ জন সদস্যের থেকে বরাবরই আলাদা৷ ইন্টারনেট, ওয়েবসাইটে স্বচ্ছন্দ হলেও দলের মঞ্চে কিন্ত্ত আগে তাঁকে সে-ভাবে দেখা যায়নি৷ তাঁর উদ্যোগে 'তৃণমূল যুবা' তৈরি হলেও সেই উদ্যোগও বিশেষ দাগ কাটতে পারেনি৷ এ হেন অভিষেকের রাজনৈতিক উত্থানকে মেনে নিতে পারছেন না দলের অনেকেই৷ শ্যামবাজারের সভায় দলের প্রথমসারির নেতারা মঞ্চে বসার সুযোগ না পেলেও কোন ক্ষমতাবলে অভিষেক সেখানে চেয়ার পেলেন, প্রশ্ন তুলছেন ওই সব নেতারা৷ তৃণমূলে পরিবারতন্ত্র কায়েম করার চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করছেন তাঁরা৷

তৃণমূলের এক যুব-নেতা হুমকির সুরেই বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে নিজের ভাইপোকে দলের মুখ হিসাবে তুলে ধরতে চাইছেন সেটা বেশিরভাগ নেতা-কর্মী ভালো চোখে দেখছেন না৷ এখনই কেউ মুখ না খুললেও ভবিষ্যতে বিদ্রোহ হতেই পারে৷ দলকে তখন অনেক মূল্য চোকাতে হবে৷'

http://eisamay.indiatimes.com/articleshow/19878461.cms


কপর্দকশূন্য সুদীপ্ত গৌরী সেনের খোঁজে

এই সময়: একসময় তিনিই ছিলেন 'গৌরী সেন'৷ পরিস্থিতির চাপে এখন তাঁকেই খুঁজতে হচ্ছে 'স্পনসর'!

মামলার খরচ জোগাতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেন৷ মাস দু'য়েক আগেও সারদা সাম্রাজ্যের বিপুল ব্যয়ভার তাঁর কাছে ছিল নিতান্তই হাতের ময়লা৷ মিডিয়ার ব্যবসা থেকে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা-- সব ক্ষেত্রেই দু'হাতে টাকা খরচ করেছেন সুদীপ্ত৷ কিন্ত্ত এখন আর আমানতকারীও নেই, এজেন্টও নেই৷ তাই লকআপে বসে মামলার খরচ চালাতে জন্য অন্য কারও সন্ধান করছেন তিনি৷ সূত্রের খবর, জেরার সময় পুলিশের কাছে সুদীপ্ত ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছেন, 'যাঁদের এক কথায় লাখ লাখ টাকা বের করে দিয়েছি, বিপদের দিনে তাঁরাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন৷'

সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে মামলা শুরু হয়েছে আরও কয়েকটি রাজ্যে৷ আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য যে তাঁকে ভবিষ্যতে সুপ্রিম কোর্টেও যেতে হবে, তা একরকম নিশ্চিত৷ মামলার খরচ বিস্তর৷ সেই টাকার জোগান কে দেবেন সুদীপ্ত সেনকে? ইতিমধ্যেই তাঁর অনেক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে৷ খোঁজ চলছে লুকিয়ে রাখা সম্পদের৷ সারদা কোম্পানির সম্পত্তির উপরও জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা৷ এই অবস্থায় মামলার খরচ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সুদীপ্ত সেনকে হাত পাততেই হবে কারও কাছে৷

কিন্ত্ত কে তাঁকে সাহায্য করবে এখন? সারদা-কাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সুদীপ্ত সেনের ঘনিষ্ঠ অনেক ব্যবসায়ীই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন৷ সূত্রের খবর, লকআপে বসেই সুদীপ্ত তাঁর আইনজীবীকে বেশ কয়েকটি ঠিকানা দিয়েছিলেন৷ আশ্বাস দিয়েছিলেন, সেখানে গেলে প্রয়োজনীয় টাকা পাওয়া যাবে৷ কিন্ত্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই ঠিকানায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি৷ কিংবা তাঁরা আইনজীবীকে টাকা দিতে চাননি৷ যদিও সুদীপ্তর আইনজীবী সমীর দাস বলেন, 'টাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে বলে আশা করছি৷ মামলার খরচ নিয়ে বিশেষ কোনও সমস্যা হবে না৷' সুদীপ্তর স্ত্রীর কাছেও মামলার খরচ চাওয়ার কোনও উপায় নেই৷ কারণ, পুলিশ এখনও তাঁর কোনও খোঁজ পায়নি৷

পুলিশ সূত্রের খবর, মামলার চালানোর খরচ নিয়ে যথেষ্ট মানসিক অশান্তিতে আছেন সুদীপ্ত৷ কখনও জামিনে ছাড়া পেলে তিনি যে টাকার ব্যবস্থা করে ফেলবেন, সে কথাও তিনি জেরায় জানিয়েছেন৷ যদিও আপাতত মামলা চালানোর জন্য সুদীপ্তকে কারা টাকা সরবরাহ করছে তার উপরও নজর রাখছে পুলিশ৷ কারণ পুলিশ নিশ্চিত, এঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও অনেক গোপন তথ্য হাতে আসবে৷

শুক্রবার সুদীপ্তকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, দুর্গাপুর এবং মালদায় তাঁর বেশ কয়েক একর জমি রয়েছে৷ সেবি কিংবা আরবিআইয়ের কোনও আধিকারিকের সঙ্গে সুদীপ্তর আর্থিক লেনদেন ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ৷ এদিন দেবযানীকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, সল্টলেকে মিডল্যান্ড পার্কের একটি অংশ কেনার পরিকল্পনা করেছিলেন সুদীপ্ত৷ মিডল্যান্ড পার্ক থেকে বাজেয়াপ্ত করা কাগজপত্র অনুযায়ী, বাঁকুড়ায় সারদা গোষ্ঠীর নামে একটি সিমেন্ট কারখানা থাকার কথা৷ সেই জমিতে আদৌ কারখানা আছে কি না, তা খোঁজ করে দেখছে পুলিশ৷


ক্ষতিপূরণ নিয়ে সংশয় হলফনামা


ক্ষতিপূরণ নিয়ে সংশয় হলফনামা

এই সময়: ভুঁইফোঁড় সংস্থায় অর্থলগ্নি করে যারা ঠকেছেন, তাদের ক্ষতিপূরণের কোনও প্রত্যক্ষ দায় রাজ্য সরকারের নেই৷ এই ধরনের সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তের ভার সিবিআইকে দেওয়ার দাবি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে যে মামলা হয়েছে, তার বিরোধিতা করে সরকারের হলফনামায় এই কথা জানানো হয়েছে৷ ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলির আমানতকারীর অর্থ তছরুপের ঘটনা নিয়ে রাজ্যে যে অশান্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তার মোকাবিলায় প্রশাসন ব্যর্থ, সরকারের তরফে এই অভিযোগও অস্বীকার করা হয়েছে, শুক্রবার হাইকোর্টে পেশ করা ওই হলফনামায়৷

লগ্নিকারীদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ নিয়ে হলফনামায় পেশ করা সরকারের বক্তব্যে সংশয় দেখা দিয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষুদ্র আমানতকারীদের টাকা ফেরাতে সরকারের তরফে ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের কথা জানিয়ে ঘোষণা করেছেন অবসরপ্রান্ত বিচারপতি শ্যামল সেনের নেতৃত্বে গঠিত বিচারবিভাগীয় কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে এই ব্যাপারে সরকার পদক্ষেপ করবে৷ কিন্ত্ত হলফনামায় তার উল্লেখ নেই৷ শ্যামল সেন কমিশনের যে সব বিচার্য বিষয়ের কথা হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, তার ৮ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীদের ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলির সম্পত্তি বেচে ক্ষতিপূরণ করা হবে৷ স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, মুখ্যমন্ত্রী যে তহবিল গড়ার কথা ঘোষণা করেছেন, তার টাকা কারা কীভাবে পাবেন, বা আদৌ পাবেন কিনা৷ এই সংশয় আরও উসকে দিয়েছে হলফনামায় তহবিলের উল্লেখ না থাকায়৷ হলফনামার ১১ নম্বর পাতায় বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী এই ব্যাপারে একটি স্কিম ঘোষণা করেছেন৷ আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, স্কিম আর তহবিল এক নয়৷ এ ব্যাপারে সরকারের সতর্ক হওয়া উচিত ছিল৷

হলফনামায় সরকার এতদিন অজানা এক তথ্য প্রকাশ করেছে৷ বলা হয়েছে, বেআইনি আর্থিক সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাম জমানায় যে বিল তৈরি হয়েছিল, বর্তমান সরকার সেটি কার্যকর করতে ইচ্ছুক ছিল৷ ২০১১-র ১৪ জুলাই রাজ্যের অর্থসচিব কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে চিঠি দিয়ে বিলটির দ্রুত অনুমোদন দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন৷ একই অনুরোধ জানিয়ে গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ফের চিঠি দেওয়া হয়৷ কিন্ত্ত পরে সরকার মত বদল করে৷ অর্থদন্তরের ইকোনমিক অফেন্স ইনভেস্টিগেশন সেল জানায়, কেন্দ্রের অনুমোদনের জন্য পাঠানো বিলটির সাহায্যে বেআইনি আর্থিক সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়৷ এরপরেই নতুন বিল তৈরির উদ্যোগ শুরু হয়৷

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি দাবি করেছেন, ১৫ এপ্রিলের আগে তিনি প্রতারণার ঘটনা জানতেন না৷ হলফনামায় কিন্ত্ত বলা হয়েছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই বেআইনি আর্থিক সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগ নিয়েছিল৷

এদিকে, শুক্রবার সিবিআইয়ের আইনজীবী জানিয়েছেন, তারা ভুঁইফোঁড় সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত চালাতে প্রস্ত্তত৷ এই সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট আদালতে পেশের জন্য প্রস্ত্তত হয়েই এসেছিলেন সিবিআইয়ের আইনজীবী৷ কিন্ত্ত এদিন রাজ্য সরকার তাদের হলফনামা পেশ করার পর অন্য পক্ষরা ওই হলফনামার প্রত্যায়িত নকল না পাওয়ায় হাইকোর্ট মামলাটির শুনানি বুধবার পর্যন্ত স্থগিত করে দেয়৷ এদিন প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি তাদের আসন গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্য সরকারের কৌঁসুলি অশোককুমার বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের বক্তব্য হলফনামার আকারে পেশ করেন৷ সঙ্গে সঙ্গে অন্য পক্ষের আইনজীবীরা ওই হলফনামার প্রত্যায়িত নকল পাওয়ার আবেদন করেন৷ ডিভিশন বেঞ্চ প্রত্যেক পক্ষকে হলফনামার প্রত্যায়িত নকল দেওয়ার নির্দেশ দেয়৷

হলফনামায় রাজ্য সরকার জানিয়েছে, ভুঁইফোঁড় সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তে প্রশাসন যথেষ্ট ব্যবস্থা নিয়েছে৷ তাই সিবিআই তদন্তের প্রয়োজন নেই৷ কী কী ব্যবস্থা সরকার নিয়েছে তার বিশদ বর্ণনা রয়েছে হলফনামায়৷ রাজ্যের অর্থ দন্তরের যুগ্ম সচিবের পেশ করা ওই হলফনামায় সিবিআই তদম্ত চেয়ে জনস্বার্থ মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলা হয়েছে৷ কিন্ত্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্তের ভার নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তাদের হাতেই সারদাসহ যাবতীয় ভুঁইফোঁড় সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তের দায়িত্ব দিতে পারে আদালত৷ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইতিমধ্যেই অসমের দুটি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে৷ সেই তদন্তের সূত্র ধরে তাদের এ রাজ্যেও হানা দিতে হবে৷ তাই এ রাজ্যে তদন্তের ভার নিতে তাদের বাড়তি বেগ পেতে হবে না৷

সিবিআইয়ের আইনজীবী হিমাংশু দে সিবিআইয়ের বক্তব্য পেশ করার জন্য যে রিপোর্টটি নিয়ে এসেছিলেন সেটি এদিন আর পেশ করার সময় হয় নি৷ আদালতের বাইরে তিনি জানান, সিবিআই পরদিন ওই রিপোর্টটি পেশ করে জানিয়ে দেবে যে, বেআইনি আর্থিক সংস্থার কেলেঙ্কারির তদন্তভার নিতে তারা প্রস্ত্তত৷ সমস্ত ঘটনাটির উপর তারা নজর ও খোঁজখবর নিচ্ছে৷ আদালত যে দিনই সিবিআইকে তদন্ত করতে নির্দেশ দেবে সেই দিন থেকেই তদন্ত শুরু করে দেওয়া হবে৷ তবে রাজ্য সরকারকে পরিকাঠামো ও কর্মী দিয়ে তাদের সাহায্য করতে হবে৷

http://eisamay.indiatimes.com/articleshow/19877098.cms


লগ্নি সংস্থা নিয়ে পরপর চিঠি, সাড়াই দেয়নি রাজ্য
কটি-দু'টি নয়, সাত মাসের ব্যবধানে পরপর চারটি চিঠি এসেছিল দিল্লি থেকে। লগ্নি সংস্থাগুলির বেআইনি কার্যকলাপের বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে চিঠি দিয়েছিল রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরকে, যে দফতরের দায়িত্ব খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। 
প্রথম চিঠিতেই দ্রুত জবাব দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সে চিঠির কোন জবাবই দেয়নি রাজ্য! পরের তিনটি চিঠিরও না!
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, এ বছর পয়লা বৈশাখের আগে তিনি বা তাঁর সরকার এই রাজ্যে লগ্নি সংস্থাগুলির বেআইনি কাজকর্মের বিষয়ে কিছুই জানতেন না। কিন্তু সরকারি নথি বলছে, ২০১১ সালের অগস্ট মাস থেকে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে মোট চারটি চিঠি পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তত দিনে রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বয়স তিন মাস পেরিয়ে গিয়েছে। মমতার দল তখন কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের শরিকও। রাজ্যকে কেন্দ্রের তরফে এটাও বলা হয়েছিল, স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব এই ব্যাপারে রিপোর্ট চেয়েছেন। তাঁকে এবং প্রধানমন্ত্রীর অফিসকে এই বিষয়ে অবগত করতে হবে বলে রাজ্যকে পর পর দেওয়া চিঠিতে জানিয়েছিল দিল্লি।
রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, লগ্নি সংস্থাগুলির অসাধু কার্যকলাপ সম্পর্কে কেন্দ্রের দেওয়া চিঠিগুলিকে রাজ্য আমলই দেয়নি। এমনকী ওই সব চিঠির উত্তর পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। কারণ, সবুজ সঙ্কেত মেলেনি মহাকরণের শীর্ষ স্তর থেকে। তারা যে বার বার চিঠি দিয়েও সাড়া পাচ্ছে না, সেটাও রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরকে মনে করিয়ে চিঠি আসে দিল্লি থেকে। কিন্তু কোনও কাজই হয়নি! 
রাজ্যে তৃণমূলের সরকার শপথ নেয় ২০১১-র ২০ মে। আর এই রাজ্যে লগ্নি সংস্থাগুলির অসাধু কার্যকলাপের বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রাজ্যকে প্রথম চিঠি দেয় সে বছরের ২৫ অগস্ট। চিঠির নম্বর: ১৫০১২/০৮/২০১১-সিএসআর.III। চিঠিটি দেন মন্ত্রকের যুগ্মসচিব কে কে পাঠক। এর পর মন্ত্রকের ডেপুটি সেক্রেটারি কে মুরলীধরণ প্রায় দু'মাস পরে, ২০ অক্টোবর ফের একই বিষয়ে চিঠি দেন। তাতেও রাজ্যের তরফে কোনও সাড়াশব্দ না-মেলায় যুগ্মসচিব কে কে পাঠক ১৬ ডিসেম্বর ফের চিঠি দেন এবং সেখানে ২৫ অগস্টের প্রথম চিঠি ও ২০ অক্টোবরের 'রিমাইন্ডার'-এর কথা উল্লেখ করা হয়। লগ্নি সংস্থাগুলির অসাধু কার্যকলাপের বিরুদ্ধে রাজ্যকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তা সত্ত্বেও কোনও লাভ হয়নি।
২০১২-র ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজ্যকে একই বিষয়ে ফের চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তত দিনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ওই যুগ্মসচিব বদলে গিয়েছেন। কে কে পাঠকের জায়গায় এসেছেন সুরেশ কুমার। তিনিই গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ওই চিঠি দিয়েছিলেন। সুরেশ কুমারের চিঠিতে রাজ্যকে ২০১১-র ২৫ অগস্ট থেকে লগ্নি সংস্থাগুলির বিষয়ে মন্ত্রকের পাঠানো চিঠিগুলির কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়। তার পরেও কিন্তু রাজ্যের তরফে কোনও সাড়া মেলেনি। 
রাজ্যকে যখন কেন্দ্রের তরফে ওই সমস্ত চিঠি পাঠানো হয়, তখন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব জ্ঞানদত্ত গৌতম। বর্তমানে তিনি রাজ্যের তথ্য কমিশনার। এই নিয়ে গৌতমকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
কেন্দ্রের তরফে বারবার চিঠি দেওয়া হলেও রাজ্য চুপ করে থাকল কেন? রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে মালদহ দক্ষিণ কেন্দ্রের সাংসদ, কংগ্রেস নেতা আবু হাসেম খান চৌধুরী ২০১১-র ৪ এবং ১৯ অগস্ট চিঠি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি লগ্নি সংস্থার অসাধু কার্যকলাপ ও তাদের হাতে বহু সাধারণ মানুষের প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছিলেন। ওই চিঠিতে মূল অভিযোগ ছিল সারদা সংস্থার বিরুদ্ধে। কংগ্রেস সাংসদের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট চাওয়া হয়। মহাকরণের ওই কর্তার কথায়, "২০১২-র ১৫ মার্চ কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে আর একটি চিঠি দিয়ে সারদা সংস্থার বিরুদ্ধে তাঁর তোলা যাবতীয় অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। তাই, যে-চিঠির অভিযোগের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চেয়েছিল, সেই অভিযোগই তো উঠিয়ে নেওয়া হল!" 
কিন্তু সে তো মার্চ মাসের কথা। তার আগে ২০১২-র ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত কেন্দ্র বার বার রিপোর্ট চেয়ে পাঠালেও রাজ্য সাড়া দিল না কেন?
ওই কর্তার কথায়, "সরকারের উপর মহল থেকে আমাদের এই ব্যাপারে নড়াচড়া করতে বারণ করা হয়েছিল।"

http://www.anandabazar.com/4raj3.html

ব্যতিক্রম অশোক মিত্র
হইচই সার, অর্থ-অনর্থ রোখার দায়িত্ব নিতে বিমুখ রাজনীতি
কেলেঙ্কারি হলেই হইচই! প্রতারিত মানুষের ক্ষোভের ফায়দা নিতে আসরে সব রাজনৈতিক দল। কিন্তু বৃহত্তর দায়িত্ব পালনে নেই কেউ। সারদা-কাণ্ডে ফের প্রকট এই সুবিধাবাদী রাজনীতিই!
প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে অর্থলগ্নি সংস্থায় (চালু লব্জে চিট ফান্ড) টাকা রাখা যে ভবিষ্যতের জন্য বিপদকেই ডেকে আনা, এই মর্মে প্রচার চালিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ বাম-ডান সব দলই। অথচ শহরে, মফস্সলে, গ্রামে এই ধরনের সংস্থার দৌরাত্ম্য বহু যুগ থেকে। এবং আরও আশ্চর্য, সব দলের নেতা-নেত্রীরাই মেনে নিচ্ছেন তাঁদের এই ব্যর্থতার কথা! তবে ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার তৎপরতা বিশেষ চোখে পড়ছে না সারদা-কাণ্ডের পরেও।
বস্তুত, সারদা-কাণ্ড নিয়ে বিতর্কের ঝড়ের মধ্যেই উঠে আসছে একটি গুরুতর প্রশ্ন। সারদার মতো সংস্থার হাতে সাধারণ, গরিব মানুষের ঠকে যাওয়া ঠেকাতে প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক কোনও দিক থেকেই কোনও আন্তরিক পদক্ষেপ কি হয়েছে রাজ্যে? ছোট-বড় নানান অর্থলগ্নি সংস্থার আবির্ভাব হয় বাম আমলেই। অন্তত বার তিনেক তা বড় আকার নিয়েছে এবং তখন তার প্রতিক্রিয়ায় কিছু পদক্ষেপও হয়েছে। কিন্তু গোড়া থেকে আপদ উপড়ে ফেলা হয়নি। সেই বিপদই ডালপালা মেলে মহীরূহ হয়েছে তৃণমূলের জমানায়! আর এই সূত্রেই রাজ্যের প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক শিবিরে চর্চা হচ্ছে, অশোক মিত্র ছাড়া এই ধরনের সংস্থার বিরুদ্ধে কেউই পর্যাপ্ত ভাবে সক্রিয় হননি।
যে কোনও ঘটনাতেই বামেদের ঘাড়ে দোষ চাপান তৃণমূল নেতৃত্ব। সারদা-কাণ্ডেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। তার মধ্যেও শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, "যাঁরা আজ বড় বড় কথা বলছেন, তাঁদের কিছু বলার অধিকারই নেই! অশোক মিত্র ছাড়া চিট ফান্ডের বিরুদ্ধে আর সব তো ভোঁ ভাঁ!" প্রবীণ এক সিপিএম নেতাও স্বীকার করছেন, "খুব জেদি মানুষ ছিলেন অশোকবাবু। কোনও বাধ্যবাধকতার সঙ্গে আপস করেননি। সঞ্চয়িতা মামলার জেরে চিট ফান্ডের পিছনে লেগেছিলেন বলে ওঁকে পরের নির্বাচনটাই হেরে যেতে হয়েছিল!"
কী করেছিলেন বাম জমানার প্রথম অর্থমন্ত্রী অশোকবাবু? বিধানসভা অবং অন্যান্য সূত্রের তথ্য বলছে, মোরারজি দেশাইয়ের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থমন্ত্রী এইচ এম পটেল ১৯৭৮-এ 'প্রাইজ চিট্স অ্যান্ড মানি সার্কুলেশন ব্যানিং অ্যাক্ট' পাশ করিয়েছিলেন লোকসভায়। 'জনপ্রিয়' নামে একটি অর্থলগ্নি সংস্থা এর পরে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে। সর্বোচ্চ আদালত ১৯৮০-এর ২৬ সেপ্টেম্বরের রায়ে কেন্দ্রীয় ওই আইনকেই বলবৎ রাখার কথা বলে। ঠিক সেই দিনই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নির্দেশ জারি করে রাজ্যের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অশোকবাবু ১৩৮টি ওই জাতীয় সংস্থাকে ব্যবসা গোটাতে বলেন। একটি সংস্থা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে সাময়িক স্থগিতাদেশ পেয়েছিল। কিন্তু অশোকবাবু দমেননি। তাঁর সে সময়ের ভূমিকার দৌলতেই পরবর্তী অন্তত ১০ বছর প্রতারণার কোনও বড় অভিযোগ ওঠেনি।
সিপিএমের প্রবীণ নেতাদের একাংশ মনে করেন, অশোকবাবুর মতো ভূমিকা দল বা প্রশাসনে সকলে নিতে পারলে পারলে ওই ধরনের সংস্থার দৌরাত্ম্যে পূর্ণচ্ছেদ টানা যেত অনেক আগেই। অশক্ত শরীরের স্বয়ং অশোকবাবু অবশ্য এত বছর পরে এ সব নিয়ে প্রশ্ন করলে সবিনয় বলছেন, "আমি দুঃখিত।" তবে সঞ্চয়িতা-পর্ব নিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ প্রকাশিত হয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকায়। 
প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী বিতর্কে ঢুকতে নারাজ হলেও সিপিএমের রাজ্য কমিটির এক প্রাক্তন সদস্য বলছেন, "অশোকবাবুর পরে কেউ আর সে ভাবে সক্রিয় হননি। দলের কিছু নেতা-মন্ত্রীর সঙ্গে পরবর্তী কালে এই ধরনের সংস্থাগুলির ঘনিষ্ঠতার কথা উঠে এসেছে। তবে কখনওই তৃণমূলের মতো প্রকট ভাবে নয়! এই সব সংস্থার এজেন্টদের নিয়ে দল ইউনিয়নও করেছে। কড়া হাতে দমন করার কথা তেমন ভাবে ভাবা হয়নি।" যদিও রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর আসনে অশোকবাবুর উত্তরসূরি অসীম দাশগুপ্ত বলছেন, "লিখিত অভিযোগ পেলেই একমাত্র ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। বাম সরকারের শেষ দিন পর্যন্ত সেই চেষ্টা হয়েছে। সঞ্চয়িনী, ওভারল্যান্ড, ভেরোনা-র মতো যে সব সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম, তারা বা সেই ব্যক্তিরা কি আর পরে মাথাচাড়া দিতে পেরেছে?" আর এত বড় বিতর্কের পরেও বর্তমান অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র সারদা-সহ গোটা বিষয়ে মুখ খুলতেই নারাজ! সদ্য বিধানসভায় তাঁর বক্তৃতা থেকেও কিছু মেলেনি। 
এ তো গেল প্রশাসনিক এবং আইনি বিতর্ক। কিন্তু রাজনীতির আন্দোলন? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির নেত্রী শ্যামলী গুপ্ত মানছেন, "বেআইনি মদের ঠেক বা সাট্টা-জুয়ার আসর ভাঙতে আমাদের আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু চিট ফান্ডের মতো সামাজিক বিপদের বিষয়টাকে সে ভাবে ধরা হয়নি। বড় কোনও ঘটনা ঘটলে যেটুকু হওয়ার, হয়েছে।" কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া বলছেন, "পশ্চিমবঙ্গ বেকারত্বের গ্রাসে। পোস্ট অফিসের এজেন্টরাও টাকার জন্য চিট ফান্ডে চলে যাচ্ছেন। মানুষের টাকা বাড়ানোর লোভ তো আছেই। কিন্তু গোটা ব্যাপারটা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোই হল না!" তৃণমূলের প্রবীণ শ্রমিক নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় মনে করে যা বলতে পারছেন, তা এ-ই "সঞ্চয়িতার (১৯৮০-৮১) সময় এক বার আন্দোলন করেছিলাম! ট্রেড ইউনিয়ন নয়, দলের (তখন কংগ্রেসে) হয়েই।"
প্রকাশ্যে না-হলেও রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা আড়ালে স্বীকার করেন, এই ধরনের সংস্থাগুলির এজেন্টরা ছড়িয়ে আছেন সব দলেরই ছত্রচ্ছায়ায়। চাকরির আকালের এই সমাজব্যবস্থার মধ্যে অর্থলগ্নি সংস্থা একেবারে উপড়ে ফেলার আন্দোলন করতে গিয়ে এতগুলো লোকের গ্রাসাচ্ছাদনে ছাই ফেলার ঝুঁকি নিতে চায় না কোনও দলই। সমাজ এবং অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিত্বেরা আরও একটা কথা বলছেন। দেশি মদের বৈধ ব্যবস্থা নেই বলেই গরিব মানুষ যেমন চোলাই মদের খপ্পরে পড়েন, তেমনই অর্থলগ্নি সংস্থাগুলিও পরিস্থিতির ফায়দা নেয়। গ্রামেগঞ্জে সর্বত্র আজও ব্যাঙ্ক নেই। ডাকঘরের সঞ্চয় প্রকল্প একেবারে রক্তশূন্য অবস্থায় টিকে আছে। কিন্তু ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘরের মাধ্যমে গরিব মানুষের হাতে যথাযথ সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করতেও কোনও রাজনৈতিক দলকে দেখা যায়নি! অথচ সেটা করলে কিছুটা সমস্যার শিকড়ে পৌঁছনো যেত!
সারদা-কাণ্ডের পরে 'চিট ফান্ড'গুলির প্রতারণা নিয়ে একটি পুস্তিকা তৈরি করেছে ফ্রন্ট। সেখানে ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু লিখেছেন, 'রাজ্যে বর্তমান সময়ে যে গুরুতর সামাজিক সমস্যা তৈরি হয়েছে, তা রাজ্যবাসীর সামগ্রিক সমস্যারই অঙ্গ। তাই দলমত নির্বিশেষে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজনকে বাঁচানোর দায়িত্ব নিয়ে সমাধানের লক্ষ্যে বামপন্থীদের ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে'।
'সামগ্রিক সমস্যা' নিয়ে 'দলমত নির্বিশেষে' এত দিন সবাই নির্বিকার ছিলেন কেন, কে জানে!

http://www.anandabazar.com/4raj4.html


সারদা দুর্নীতির তথ্য জানত অর্থ দফতর- বিশেষ রিপোর্ট


সারদা গোষ্ঠীর প্রতারণায় তোলপাড় রাজ্য। মনে করা হচ্ছে বাইশ হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, এত বড় কেলেঙ্কারি হয়ে গেল, আর টের পেল না রাজ্য সরকার? টের পেল না অর্থ দফতরও? কিন্তু দেখা যাচ্ছে, দুর্নীতি যে হচ্ছে, অর্থ দফতর তার সব তথ্যই পেয়েছিল। অর্থ দফতরের মন্ত্রী অমিত মিত্র। তথ্য হাতে পেয়েছিল স্বরাষ্ট্র দফতরও। যে দফতরের মন্ত্রী খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ঠিক কী ঘটেছে

২৫ সেপ্টেম্বর ২০১২
 
আলিপুরে জাতীয় গ্রন্থাগারের ভাষাভবনে বসে  স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির বৈঠক। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। 
 

বৈঠকের কার্যবিবরণীতে লেখা রয়েছে, সভাপতিত্ব করেন রাজ্যের মাননীয় অর্থমন্ত্রী ডক্টর অমিত মিত্র। 

ভাষা ভবনের বৈঠকে বক্তব্য রাখেন এসএলবিসির চেয়ারম্যান ভাস্কর সেন।
 

কী বলেছিলেন ভাস্কর সেন? 
 
বৈঠকের কার্যবিবরণী বলছে, তিনি বলেছিলেন, বিভিন্ন ব্যাঙ্কের শাখা থেকে যে রিপোর্ট আসছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, গ্রামের মানুষরা হাজারে হাজারে ব্যাঙ্ক, পোস্টঅফিস থেকে সঞ্চয় তুলে বিভিন্ন বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা রাখছেন, যে সংস্থাগুলি টাকা ফেরতের অবাস্তব আকাশচুম্বী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এর হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে সরকারের এখনই উদ্যোগ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। 
 
প্রশ্ন, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১২র ওই বৈঠকের পর কী উদ্যোগ নিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী? 
 
ডিসেম্বর ২০১২ - অর্থ দফতরের কাছে আরেকটি রিপোর্ট পাঠায় স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স অ্যাসোসিয়েশন। কী ছিল সেই রিপোর্টে? রিপোর্টে জানানো হয়, ২০১১-১২ আর্থিক বছরে  ব্যাঙ্ক এবং পোস্টঅফিসের স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে জমা পড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। 
 
আর্থিক বছর ২০১২

এক ধাক্কায় ১২ হাজার কোটি টাকা কমে দাঁড়ায় ১৫৭ কোটি টাকায়। প্রশ্ন, এক বছরে ১১ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা ব্যাঙ্ক পোস্ট অফিস থেকে কোন সংস্থায় চলে গেল? 

http://zeenews.india.com/bengali/kolkata/saradha-investigation-finance-minister-amit-mitra-under-pressure_13162.html


রাজনৈতিক তহবিলে টাকা ঢালতেন সুদীপ্ত


রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী খরচের জন্য টাকা  দিয়েছিলেন সুদীপ্ত সেন। টাকা দিতে হত রাজনৈতিক দলগুলির তহবিলেও। জেরায় গোয়েন্দাদের এমনই তথ্য জানালেন সারদা কর্তা। শুধু তাই নয়, জেরায় সুদীপ্ত সেন জানিয়েছেন, বছরের পর বছর বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থাকেও টাকা দিতে হয়েছে তাঁকে। এমনকি ব্ল্যাকমেল করেও তাঁর থেকে টাকা আদায় করা হোত। সুদীপ্ত সেন জানিয়েছেন, সিবিআইকে লেখা চিঠিতে যাঁদের নাম উল্লেখ করেছেন তিনি, তার বাইরে অনেকেই টাকা নিয়েছিলেন। 

পাশাপাশি, আমানতকারীদের প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা ফেরত দিতে হত। সেই টাকা তাঁর পক্ষে ফেরত দেওয়া সম্ভব ছিল না বলেও জেরায় জানিয়েছেন সুদীপ্ত সেন। সারদা সংস্থায় যাঁরা টাকা রেখেছেন বলে দাবি করেছেন, সেই আমানতকারীদের অনেকেই ভুঁয়ো বলে জেরায় জানিয়েছেন সুদীপ্ত সেন। কাগজে কলমে এই ভুঁয়ো আমানতকারীদের অস্তিত্ত্ব থাকলেও সংস্থায় এঁদের টাকা আসতো না বলে গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন তিনি। এই আমানতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গোয়েন্দাদের অনুরোধ করেছেন সুদীপ্ত সেন। 

http://zeenews.india.com/bengali/kolkata/sudipta-sen-inetigation_13159.html



এবার প্রতারণার অভিযোগ ভুইফোঁড় সুরাহা মাইক্রোফিনান্সের বিরুদ্ধে

সারদা, অ্যানেক্সের পর এবার সুরাহা মাইক্রোফিনান্স। আমানতকারীদের থেকে প্রায় কুড়ি কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠল সংস্থার কর্ণধার দিলীপ রঞ্জন নাথের বিরুদ্ধে। গত বাইশে এপ্রিল সংস্থার কর্ণধারের বিরুদ্ধে শিলিগুড়ির প্রধাননগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন সংস্থার এজেন্টরা। যদিও এখনও অধরা সুরাহা মাইক্রোফিনান্সের কর্ণধার। 

মাত্রাতিরিক্ত ফেরতের লোভ দেখিয়ে আমানতকারীদের থেকে কয়েক কোটি টাকা সংগ্রহ। এরপর নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও আমানতকারীদের টাকা ফেরত না দিয়ে সংস্থা বন্ধ করে দিয়ে বেপাত্তা কর্ণধার। সারদা, অ্যানেক্সের পর এবার উত্তরবঙ্গে প্রতারণার তালিকায় নাম জড়াল সুরাহা মাইক্রোফিনান্সের। উত্তরবঙ্গ জুড়ে সংস্থার ছেচল্লিশটি কার্যালয়ে এজেন্টের সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার।  দশ লক্ষ আমানতকারীদের থেকে প্রায় কুড়ি কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে সুরাহা মাইক্রোফিনান্স। একত্রিশে জানুয়ারি শেষ পর্যন্ত সংস্থার কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যান কর্ণধার দিলীপ রঞ্জন নাথ।  অবিলম্বে দিলীপ রঞ্জন নাথকে গ্রেফতার করে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি করেছেন সংস্থার এজেন্টরা।  

অভিযোগ, সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপণ দিয়ে টাকা ফেরতের কথা জানানো হয় সংস্থার তরফে। কিন্তু এরপরও নির্ধারিত দিনে টাকা ফেরত দিতে পারেনি  সংস্থার এজেন্টরা। আদালতে গেলে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না বলে এজেন্টদের ভয় দেখানো হত বলেও দাবি এজেন্টদের। 

http://zeenews.india.com/bengali/zila/suraha-microfinance_13172.html


কংগ্রেসের সভায় মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি

এই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের উঠল। চিট ফান্ড কাণ্ডে দাবিটা তুলল কংগ্রেস। সারদাকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবিতেও অনড় কংগ্রেস নেতার।  চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে দোষীদের গ্রেফতার ও আমানতকারীদের টাকা ফেরানোর দাবিতে আজ সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত  মিছিল করে কংগ্রেস। দুবছরে এই প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি করল কংগ্রেস। 

আজ মিছিল শেষে সভায় মুখ্যমন্ত্রী তথা সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ। দীপা দাসমুন্সি ঘোষণা করেন `প্রতিশ্রুতির সরকার আর নেই দরকার।` তবে শুধু দীপাই নন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ হানলেন প্রদীপ ভট্টাচার্য, ওমপ্রকাশ মিশ্রও। তাঁরা প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রীর সততায়। 

http://zeenews.india.com/bengali/kolkata/congress-wants-cm-s-resignation_13170.html





সারদাকাণ্ডে বহিষ্কার অসীম দাশগুপ্তর আপ্তসহায়ক


প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তর আপ্তসহায়ককে দল থেকে বহিষ্কার করল সিপিআইএম নেতৃত্ব। তিনি উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহের সিপিআইএম নেতা। দলীয় মুখপত্র গণশক্তিতে জানানো হয়েছে, সিপিআইএম নেতৃত্বকে না জানিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অভিযোগে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

গত বুধবার সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে বিধাননগর কমিশনারেটে ডেকে পাঠানো হয় গণেশ দেকে। দীর্ঘক্ষণ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দারা। টানা জিজ্ঞাসাবাদে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসেন পুলিসকর্মীরা।


http://zeenews.india.com/bengali/kolkata/ganesh-cpim_13155.html


দলীয় কর্মীদের পঞ্চায়েত বার্তা মমতার


শীঘ্রই পঞ্চায়েত নির্বাচন হচ্ছে একথা মাথায় রেখে দলের নেতা-কর্মীদের সংগঠন আরও জোরদার করার নির্দেশ দিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে যে কার্যত পাখির চোখ করেছে শাসক দল, এই বার্তাই শুক্রবার ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রের সভা থেকে স্পষ্ট করে দেন তিনি। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থেকে দূরে থাকতে নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।       

পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে যে টানাপোড়েন চলছে, তার মাঝে পড়ে তৃণমূলের নীচুতলার কর্মীদের মনোবল যাতে কোনওভাবে নষ্ট না হয়, সে দিকে দলনেত্রীর বিশেষ নজর রয়েছে। শুক্রবার ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে দলকে চাঙা করার কাজটাই আগাগোড়া করে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, "পঞ্চায়েতকে পাখির চোখ করেছি আমরা। ভালোভাবে আমাদের পঞ্চায়েতে লড়তে হবে। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে লড়বেন।" 

দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়েও এদিন সরব ছিলেন নেত্রী। সভায় হাজির শুভেন্দু অধিকারী এবং শিউলি সাহাকে রীতিমতো নাম করে সতর্ক করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পূর্ব মেদিনীপুরের এই দুই সাংসদ, বিধায়কের কাজিয়া বারবার প্রকাশ্যে চলে এসেছে। অবিলম্বে দু`জনকে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন দলনেত্রী। যে কোনওরকম অন্তর্দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নির্বাচনের কাজে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে মাথায় রেখে এদিন তৃণমূলের শীর্ষস্তরের নেতাদের বিভিন্ন জেলার দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির জন্য মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র, গৌতম দেব, অমল আচার্য, সৌরভ চক্রবর্তীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।  

http://zeenews.india.com/bengali/kolkata/mamata-address-party-men-ahead-of-panchayat-poll_13157.html


আতঙ্কিত সারা রাজ্যের চিটফান্ডের আমানতকারীরা


সারদা কাণ্ডের জেরে আতঙ্কে রাজ্যের অন্যান্য চিটফান্ডের আমানতকারীরা। টাকা ফেরতের দাবিতে কোথাও বিক্ষোভ কোথাও আবার চিটফান্ড অফিসেই তালা ঝুলিয়েছেন আমানতকারীরা। এই অবস্থায় একটি সংবাদ পত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার আবেদন করেছে রোজভ্যালী কর্তৃপক্ষ। 

সর্বনাশের কারবারে সর্বশান্ত রাজ্যের কয়েকলক্ষ মানুষ। বিক্ষোভে উত্তাল রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত। আতঙ্কে রাজ্যের অন্যান্য চিটফান্ডের আমানতকারীরাও। বুধবার শিলিগুড়িতে বিক্ষোভ মিছিল করেন অ্যানেক্স হাউসিংয়ের আমানতকারীরা। মহকুমা শাসকের কাছে স্মারক লিপিও জমা দেন তাঁরা। এরপর মিছিল করে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর দফতরের সামনে জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। ক্ষুব্ধ এজেন্টরা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার দাবি জানান। 

বিক্ষোভে অংশ নেন সুরাহা মাইক্রো ফাইন্যান্স এবং সারদার প্রতারিত এজেন্ট ও গ্রাহকরাও। তিনটি চিটফান্ড সংস্থার কয়েকশো এজেন্টের বিক্ষোভে হিলকার্ট রোডে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। প্রায় দু ঘন্টার বেশি সময় ধরে চলে পথ অবরোধ। সারদা কাণ্ডের জেরে রাজ্যের বিভিন্ন চিটফান্ডগুলি থেকে টাকা তুলে নেওয়ার হিড়িক পড়েছে। সব আমানতকারীই মেয়াদ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই টাকা তুলে নিতে চাইছেন। অভিযোগ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ডায়মন্ডহারবারে টাকা তোলার দাবি জানালে আমানতকারীদের মারধর করা হয়। অভিযোগ কপাটের হাটে জীবনদ্বীপ নামে একটি চিটফান্ড অফিসে আমানতকারীরা টাকা চাইতে গেলে তাদের মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপরই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। ওই চিটফান্ড অফিসের কর্মীদের আটকে তালা লাগিয়ে দেন ক্ষুব্ধ আমানতকারীরা।

একই ঘটনা ঘটে টাওয়ার গ্রুপের ডায়মন্ডহারবার শাখায়। অধিকাংশ আমানতকারীদের অভিযোগ টাকা সম্পূর্ণ হওয়ার পরও মিলছে না টাকা। ঘরছাড়া এজেন্টরা। দুর্গাপুরে সিটি সেন্টারে রোজ ভ্যালি অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান আমানতকারীরা। মেয়াদ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই টাকা তুলে নেওয়ায় কেটে নেওয়া হয়েছে একটা অংশ। পুরো টাকার দাবিতে রোজ ভ্যালি অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান আমানতকারীরা।

http://zeenews.india.com/bengali/zila/rose-valley-in-question_12974.html


ফের আরও এক ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে নাম জড়াল শতাব্দী রায়ের

সারদার পর আরও একটি ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে নাম জড়াল শতাব্দী রায়ের। বোলপুরের একটি ভুঁইফোড় অর্থ লগ্নিকারী সংস্থার বিজ্ঞাপন করেছিলেন তিনি। এমনকী তৃণমূলের এই অভিনেত্রী সাংসদকে সামনে রেখেই অর্থলগ্নি সংস্থা স্কাইলার্ক দেদার টাকা তুলেছে বলে অভিযোগ। সারদাকাণ্ডের পর থেকেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে সংস্থার কর্পোরেট অফিস। 

সারদাকাণ্ডে নাম জড়িয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক মন্ত্রী সাংসদের। সেই তালিকায় রয়েছেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়ও। এবার চিটফান্ড ইস্যুতে আরও একটি সংস্থার সঙ্গে নাম জড়াল তৃণমূলের এই অভিনেত্রী সাংসদের।

দুবছর আগে বোলপুরের বাঁধগোড়া এলাকায় প্রথম অফিস খোলে স্কাইলার্ক গ্রুপ। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা এবং ভিনরাজ্যেও দেদার টাকা তোলার পর বোলপুরের রামকৃষ্ণ রোডে সংস্থার কর্পোরেট অফিস খোলা হয়। স্কাইলার্কের সমস্ত বিজ্ঞাপনেই রয়েছেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়।  
 
বিজ্ঞাপনে আকাশ ছোঁওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বীরভূমের সাংসদ। এখন আমানতকারীদের টাকা ফেরতের আশা বিশ বাঁও জলে। কারণ, সারদাকাণ্ডের পর থেকেই বন্ধ সংস্থার অফিস। গা ঢাকা দিয়েছেন কর্ণধাররা।

http://zeenews.india.com/bengali/zila/satbdi-again-in-controversy_13132.html


গণেশকে বলির পাঁঠা করে কি বাকি নেতাদের ছাড়েরই ব্যবস্থা সিপিএমে



গণেশকে বলির পাঁঠা করে কি বাকি নেতাদের ছাড়েরই ব্যবস্থা সিপিএমে

প্রসেনজিত্‍ বেরা

প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের প্রাক্তন আপ্ত-সহায়ক (সিএ) গণেশ দে-কে দল থেকে বহিষ্কার করল সিপিএম৷ গত সপ্তাহে পুলিশ সারদা-কেলেঙ্কারিতে যুক্ত সন্দেহে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে৷ সেই সূত্র ধরেই দল থেকে গণেশবাবুকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএমের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা কমিটি৷ শুক্রবার রাতে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে এই সিদ্ধান্তের পরে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে রাজ্য নেতৃত্বকেও৷ দলীয় বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, খড়দহ এলাকার পার্টি-সদস্য গণেশ দে দলের অজান্তে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন৷ এই অভিযোগে তাঁকে পার্টি থেকে সরাসরি বহিষ্কার করা হল৷ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেব শনিবার বারাসতে স্বীকার করে নেন, যে 'গুরুতর অপরাধে'ই গণেশ দে-কে বহিষ্কার করা হয়েছে৷ তাঁর বক্তব্য, 'গণেশ দে যে চিঠি পাঠিয়েছিল তাতে যা আছে, দেখা যাচ্ছে সারদার সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল৷ পানিহাটির একটি মেলার জন্য কয়েক হাজার টাকা নিয়েছিল৷ যে সারদা এখন রাজ্যে এক ঘৃণিত নাম, তাদের থেকে সাহায্য নিয়েছে৷ নেতাদের কাছ থেকে আমরা খবর নিয়েছি, তার পর আর এক মুহূর্ত দেরি করিনি ব্যবস্থা নিতে৷' সারদা-সহ অন্য বেআইনি আর্থিক সংস্থাগুলির নেটওয়ার্ক জেলায় কতটা ছড়িয়েছে তা জানার জন্য সমস্ত জোনাল সম্পাদক ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের কাছ থেকে জেলা নেতৃত্ব যে ইতিমধ্যে রিপোর্টও নিয়েছেন, তা-ও জানিয়েছেন গৌতমবাবু৷

সিপিএম সূত্রের খবর, সুদীপ্ত সেন এবং গণেশবাবুকে জেরা করে পুলিশ সারদার সাম্রাজ্য বিস্তারে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর সিএ-র ভূমিকা সম্পর্কে অনেক তথ্যই জানতে পেরেছে৷ গণেশবাবু জেরার মুখে এমন কিছু তথ্য গোয়েন্দাদের কাছে ফাঁস করেছেন যা অদূর ভবিষ্যতে পার্টিকেও বিপাকে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা নেতৃত্বের৷ অসীমবাবুর ভূমিকাও যে পুলিশ খতিয়ে দেখতে পারে--তেমন জল্পনাও চলছে৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার শ্যামবাজারের সভায় হুঁশিয়ারির সুরে স্পষ্টই জানিয়েছেন, আইনের ফাঁস থেকে কেউই ছাড়া পাবেন না৷ যা থেকে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কর্তারা মনে করছেন, গণেশবাবুর বয়ানকে হাতিয়ার করে পুলিশ এ বার সিপিএম নেতাদের নিশানা করতে পারে৷ তাই আগেভাগেই গণেশবাবুর সঙ্গে পার্টি সম্পর্ক ছিন্ন করল৷ যাতে তাঁর 'অকাজে'র দায় দলকে নিতে না হয়৷

সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব গণেশবাবুর বহিষ্কারকে শুদ্ধকরণের অঙ্গ হিসাবেই দেখাতে চাইছেন৷ সেই সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত তৃণমূলের উপরে চাপ বাড়াবে বলেও মনে করছেন সিপিএম নেতারা৷ তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ কুণাল ঘোষকে পুলিশ সারদাকাণ্ডে জেরা করলেও স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন৷ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের তাই মন্তব্য, 'আমাদের নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হয়েছে সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে যাঁদের সরাসরি সম্পর্ক থাকার বিষয় জানা যাবে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ আমাদের দলে সততার প্রতীক এই হোর্ডিং দিয়ে কাউকে আড়াল করা হয় না৷ আমরা কাউকে আড়াল করতে চাই না বলেই সিবিআই তদন্তও চাইছি৷'

দলের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে গণেশবাবুর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি৷ তবে এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ঘরে-বাইরে প্রশ্নের মুখে পড়েছে সিপিএম৷ গণেশবাবুকে তাড়ানোর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে তিনি পার্টির অজান্তে সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন৷ প্রশ্ন উঠেছে সারদার মতো বেআইনি কারবারের সঙ্গে পার্টির জ্ঞাতসারে যোগাযোগ রাখলে কি তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না? সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর যে সদস্য তথা কলকাতার যে নেতার বিরুদ্ধে সারদা গোষ্ঠীকে সংবাদমাধ্যমের ব্যবসায়ে নিয়ে আসার পরামর্শ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে কি দল কোনও ব্যবস্থা নেবে? রাজ্য সিপিএমের এক শীর্ষ নেতা প্রতি বছর যে মেলার আয়োজন করেন সেই মেলায় পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আগে দেখা গিয়েছে অপর একটি বেআইনি আর্থিক সংস্থাকে৷ রাজ্য সিপিএমের এই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে কি কোনও ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্রীয় কমিটি? এই ধরনের সংস্থাকে রাজারহাটে জমি দেওয়ার বিষয়েও এক সময় এগিয়ে ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য৷ তাঁর বিরুদ্ধেও কি ব্যবস্থা নেবে পার্টি? পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণায় এরকমই একটি সংস্থার ফিল্ম সিটি গড়ার কাজে সিপিএমের যে নেতারা মদত দিয়েছিলেন তাঁদের বিরুদ্ধে পার্টি ব্যবস্থা নেবে কি না, গণেশ দে'র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পর উঠছে সে প্রশ্নও৷ যদিও গৌতম দেব দাবি করেছেন, 'পার্টির যে কোনও স্তরের কেউ এমন আর্থিক সংস্থার সঙ্গে জড়িত থাকলে আমরা ২৪ ঘণ্টাও সময় নেব না ব্যবস্থা নিতে৷'

দলের একাংশের বক্তব্য, গণেশবাবুকে তাড়িয়ে দিয়ে পার্টি স্বীকার করে নিল শুদ্ধকরণের নামে এযাবত্ যা বলা হয়েছে তা শূন্যকলসির ঢক্কানিনাদ ছাড়া কিছু নয়৷ দলের একাংশের বক্তব্য, গণেশ দে-কে বলির পাঁঠা করে আপাতত গা বাঁচালেন বহু তাবড় নেতা৷ গণেশবাবু প্রায় ১৫ বছর অসীম দাশগুপ্তের পিএ ছিলেন৷ মহাকরণে অসীমবাবুর ঘরের বাইরে ছিল তাঁর চেম্বার৷ সেখানে বসেই সরকারি ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে তিনি সারদা গোষ্ঠীকে নানা সুবিধা পাইয়ে দিয়ে টাকাপয়সা নিয়েছেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে৷ প্রশ্ন উঠেছে গণেশবাবু পুলিশি জেরার মুখে পড়ার আগে পার্টি কি সত্যি তাঁর কার্যকলাপ সম্পর্কে অন্ধকারে ছিল নাকি সব জেনেও চুপ করে ছিল? যদিও গৌতম দেব দাবি করেছেন তাঁরা গত পরশু গণেশ দে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছেন৷

দলীয় সূত্রের খবর, গণেশবাবুর সারদা ঘনিষ্ঠতার অনেক সুবিধাই পার্টি নিয়েছে৷ তার মধ্যে পার্টি মুখপত্রে সারদা গোষ্ঠীর মোটা অঙ্কের বিজ্ঞাপন অন্যতম৷ এছাড়া গত বিধানসভা ভোটের আগে পার্টির নির্বাচনী তহবিলে গণেশবাবু মোটা অঙ্ক জমা দিয়েছিলেন যা তাঁর মতো সর্বক্ষণের কর্মীর পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব ছিল না৷ কিন্তু পার্টি নেতাদের কাছ থেকে টাকার উত্‍স নিয়ে তাঁকে কোনও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়নি৷

প্রশাসনের চোখে অভিযুক্ত হওয়ার পর পার্টির ব্যবস্থা নেওয়ার ঘটনা অবশ্য সিপিএমে ভুরিভুরি রয়েছে৷ বছর দশেক আগে দমদমের জোড়া খুনে দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুলিশ গ্রেপ্তার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ একই সিদ্ধান্ত হয়েছিল জলপাইগুড়ির সিটু নেতা তারকেশ্বর লোহার এবং বালির যুব নেতা বিশ্বজিত্‍ বসুর ক্ষেত্রে৷ খুনের মামলায় জড়িয়ে যাওয়ার পর পার্টি তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেছিল৷

http://eisamay.indiatimes.com/Ganesh-de-expelled-from-cpm/articleshow/19884066.cms


সারদাকাণ্ডে ফের সিবিআইয়ের তদন্তের দাবিতে সরব হলেন সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম৷ বললেন, গোটা কাণ্ডের ব্যাপ্তি বিবেচনা করে সিবিআইয়ের হাতেই তদন্তভার তুলে দেওয়া উচিত৷ এর পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রীকেও নিশানা করেন সেলিম৷ বলেন, দোষীদের আড়াল করতে নিরপেক্ষ তদন্ত করাতে ভয় পাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ 


সারদা কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে লাটে ওঠা সংস্থার কর্ণধারের যোগাযোগ নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীদলগুলি।সম্প্রতি পানিহাটিতে সিপিএমের সভায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এই কেলেঙ্কারির ঘটনায় শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ শানিয়ে দাবি  করেন, তাঁরা ক্ষমতায় থাকাকালে কোনও অর্থ লগ্নি সংস্থার কর্তাদের কাছে ঘেঁষতে দেননি। এই অবস্থায় বিরোধীদের ওপর চাপ বাড়িয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার শ্যামবাজারে তৃণমূলের জনসভা থেকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সহ সিপিএম নেতাদের সঙ্গে অর্থ লগ্নি সংস্থার অধিকর্তার ছবি তুলে ধরেন। বুদ্ধদেবের দাবিকে তীব্র ভাষায় কটাক্ষ করেন। মমতার খোঁচার জবাব দিতে বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করল না সিপিএম-ও৷ শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহম্মদ সেলিম৷ সেলিম বলেছেন, সংবাদপত্রে প্রদত্ত বিজ্ঞাপনে ঘোষিত একটি প্রকল্পের উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন ততকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সেলিমের আরও দাবি, লগ্নি সংস্থার কোনও প্রোডাক্ট লঞ্চে কিংবা তাদের নিজস্ব কোনও অনুষ্ঠানে কোনওদিনই সিপিএমের কাউকে দেখা যায়নি।
শুধু প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে লগ্নি সংস্থা বিতর্কে টানার জবাবই নয়, সেইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্ণধারের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক নিয়েও চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন মহম্মদ সেলিম৷
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, সিবিআই হলেই প্রকাশ্যে আসবে সারদা-তৃণমূল যোগসাজস৷ তাই ভয় পাচ্ছেন মমতা৷ লগ্নি সংস্থার বেনিয়ম ঠেকাতে বিল আনার ব্যাপারে বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী ব্যর্থতার যে অভিযোগ তুলেছেন তাও খারিজ করে দিয়েছেন সেলিম। তিনি বলেছেন,মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, তিনি ৪৮ ঘন্টার মধ্যে বিধানসভায় বিল এনেছেন।এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ভাঁওতা দেওয়ার অভিযোগ তুলে বলেছেন, বিল পাস হলেই আইন হয় না, তা জেনেও কৃতিত্ব দাবি করা হচ্ছে। আসলে  বিল আনার নামে সারদাকে সম্পত্তি সরানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সেলিম৷তাঁর দাবি, সারদাকে সামনে রেখে লুঠ চালিয়েছে তৃণমূল৷ 
এই কেলেঙ্কারির কথা মুখ্যমন্ত্রী আগে জানতেন না বলে যে দাবি করেছেন তা সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন সেলিম। তিনি বলেছেন,ঘটনার কথা আগে থেকেই জানতেন মমতা৷ কংগ্রেসের সঙ্গে জোট থাকায় অগ্রাহ্য করা হয়েছিল সেবি-সহ কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির রিপোর্ট৷ এখন মিথ্যাচার করছেন৷ তিনি আরও বলেছেন, গত বছরের ডিসেম্বরে বিধানসভায় অর্থ লগ্নি সংক্রান্ত বিষয়ে বিতর্ক চেয়েই প্রহৃত হতে হয়েছিল দুই বাম বিধায়ককে।

http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36300-2013-05-03-16-32-21


হাওড়ায় মমতার বাজি খেলোয়াড় প্রসূন

হাওড়ায় মমতার বাজি খেলোয়াড় প্রসূন
পরীক্ষায় প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়।

এই সময়: হাওড়া কোর্টের বাইরে তখন জোর জল্পনা৷ এত তাড়াতাড়ি কেন ভোট ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন? একজন প্রশ্ন করে বসলেন, মাত্র কয়েক মাসের জন্য কেই-ই বা হবেন সাংসদ! প্রয়াত অম্বিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (হাওড়াবাসীর টকাইদা) অবর্তমানে হাওড়া সদর থেকে কাকেই বা সাংসদ হওয়ার টিকিট দেবে তৃণমূল? এঁদের কেউ পুরসভার কর্মী, কেউ আদালতে কাজ করেন, কেউ পুলিশ৷ কেউ বা নেহাতই হুজুগে নাগরিক৷ আলোচনায় কান পেতেছেন৷ ফুটপাথের দোকানে চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দেওয়ার ফাঁকেই তাঁদের একজনের মোবাইল বেজে উঠল৷

মোবাইল রেখে বিরস মুখে ভদ্রলোক বললেন, 'ফুটবলার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের ক্যান্ডিডেট৷' ব্যস, বদলে গেল আলোচনার অভিমুখ৷ 'এখানকার নেতাদের খেয়োখেয়ির আঁচ আগেই ছিল তৃণমূল ভবনে৷ তাই আগে থেকেই প্রার্থী ঠিক করে রাখা ছিল৷ রাজনীতির বাইরের লোক এনে দলের মার্কামারা নেতাদের বিরুদ্ধে বিরোধীদের অস্ত্র শানানোর সুযোগ দিলেন না মমতা', বললেন মধ্যবয়সি এক নাগরিক৷ একজন ফুট কাটলেন, 'আসলে উনি বুঝেছেন, সারদা কেলেঙ্কারিতে যে ভাবে দলের নেতাদের নাম জড়িয়েছে, তাতে সরাসরি দলের লোককে দাঁড় করালে বিড়ম্বনা বাড়ত৷ তাই ফুটবলারেই ভরসা৷'

নানা মুনির নানা মত৷ এঁরা প্রায় সকলেই গত লোকসভা ভোটে অম্বিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাগ্য নির্বাচন করেছিলেন৷ আবার ২ জুন হাওড়া লোকসভার নতুন সাংসদের ভাগ্য নির্ণয় করবেন এঁরাই৷

শহুরে নাগরিকরা যখন জেলায় টকাইদার অবর্তমানে যোগ্য লোকের অভাবে বাইরে থেকে প্রার্থী আনার পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনায় মশগুল, সাঁকরাইল-পাঁচলায় তখন আলোচনায় শুধুই বেআইনি ৷ সারদা কত লোককে সর্বস্বান্ত করেছে, স্থানীয় নেতাদের কারা কারা সুদীপ্ত সেনদের হয়ে তখন মাঠে নেমেছেন, দাক্ষিণ্য নিয়েছেন, সেই আলোচনা যেন নতুন করে শুরু হয়েছে ভোট ঘোষণার পর৷ সন্ধ্যায় রানিহাটি মোড়ের জটলায় নেতাদের নাম করেই চলেছে উত্তন্ত বাক্যবিনিময়৷ কেউ বলছেন, কলকাতার নেতাদের দেখানো পথেই হেঁটেছেন গ্রামের নেতারা৷ তবে বিরোধীরা বলছেন, এখনও নানা বেআইনি আর্থিক সংস্থার সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে চলছেন স্থানীয় কয়েকজন তৃণমূল নেতা৷ শোনা যাচ্ছে, এই নেতাদের দেখেই হাজার হাজার জরি শিল্পী টাকা রেখেছিলেন সারদায়৷ গ্রামের ভোটারদের ক্ষোভের সেই আগুনের আঁচ তৃণমূলের ফুটবলার প্রার্থীকে কতটা ছুঁয়ে যাবে, সেদিকে তাকিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব৷ একে সাংসদ মারা যাওয়ার সাত দিনের মাথায় ভোট ঘোষণায় কিছুটা বিস্মিত তাঁরাও৷ সারদার ঘা যে আগামী মাসখানেকের মধ্যে শুকোবে না, তা সকলেরই জানা৷ তাই এই বাজারে শাসকদল ভোট চাইতে গেলে নিঃস্ব পরিবারগুলি কী রকম ব্যবহার করবে, তা ভেবে এখন থেকেই চিন্তিত নেতৃত্ব৷

হাওড়া লোকসভার সাতটি বিধানসভাই তৃণমূলের দখলে৷ ২০০৯-এ কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে প্রায় ৩৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে লোকসভায় জিতেছিল তৃণমূল৷ এ বারে আর জোটের সম্ভাবনা নেই৷ বিধানসভা নির্বাচনের পরে বহু কংগ্রেস কর্মী এখন তৃণমূলে৷ তাতেও ছয়-সাত শতাংশ ভোট রয়েছে ওদের৷ এ সব তথ্য গড়গড়িয়ে বলে যাচ্ছিলেন ধুলাগড়ের শাসকদলের এক নেতা৷ দলের জেলা নেতাদের মধ্যে আকচা-আকচিতে বীতশ্রদ্ধ নিচুতলা৷ বাণী সিংহরায়, অরূপ রায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে অশোক ঘোষ-- সকলেরই নাকি 'যত মত তত পথ'৷ সেই তুলনায় বাইরের প্রার্থী দেওয়ায়, নেত্রী এসে নির্দেশ দিলে ক্ষোভ ভুলে সকলেই ঝাঁপাবেন বলে আশা নিচুতলার নেতাদের৷

ভোটের ঘণ্টা বেজে গেলেও হাওড়ায় সিপিএম আছে সিপিএমেই৷ সন্ধেতেও ডুমুরজলা স্টেডিয়ামের আগের দলীয় অফিসে তালা৷ মাঝারি মাপের এক নেতাকে প্রার্থী কে হতে পারে জানতে চাইতেই, বাঁকা চোখে সাংবাদিকের অভিসন্ধি বোঝার চেষ্টা করে, শেষ পর্যন্ত আলিমুদ্দিন দেখিয়ে দিলেন৷ বামমনস্ক কেন্দ্রীয় সরকারের এক অবসরপ্রান্ত চাকুরের স্বগতোক্তি, 'তৃণমূলের কাণ্ডকারখানায় ক্ষোভ হয়৷ কিন্ত্ত সিপিএম? এখনও তাদেরই মতো৷ শেষে সেই অগতির গতি স্বদেশ চক্রবর্তীকেই হয়তো ভরসা!' 

http://eisamay.indiatimes.com/articleshow/19877036.cms


রাজ্যের 'বাজে খরচ' নিয়েও কোর্টে প্রশ্ন নির্বাচন কমিশনের


এই সময়: পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনে তাদের অনিচ্ছার অন্যতম কারণ হিসাবে রাজ্য সরকার অতিরিক্ত খরচের যে যুক্তি দিয়েছিল আদালতে, তার বিরোধিতা করতে গিয়ে 'গুরুত্বহীন কাজে' সরকারের খরচ নিয়ে নজিরবিহীন ভাবে প্রশ্ন তুলল রাজ্য নির্বাচন কমিশন৷ শুক্রবার হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চে পঞ্চায়েত-মামলার শুনানির শেষ-পর্বে কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্য পাল বলেন, 'সরকার বহু খাতে অর্থ খরচ করছে, যার কোনওটাই পঞ্চায়েত ভোটের মতো গুরুত্বপূর্ণ নয়৷' এই প্রসঙ্গে তিনি বিনোদন জগতের জন্য সরকারের সাম্মানিক চালুর বিষয়টিরও উল্লেখ করেন৷ প্রসঙ্গত, বিভিন্ন মেলার আয়োজন থেকে শুরু করে একাধিক ভাতা চালু, এমনকী আইপিএলের বিজয়ী-বরণে সরকারের অর্থ খরচ নিয়ে আগেই নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে৷ এ বার আদালতে সেই প্রসঙ্গের অবতারণা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সঙ্গে মীরা পাণ্ডের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন সংঘাত অব্যাহত রাখারই বার্তা দিল৷ নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা শাসকদল কুক্ষিগত করতে চায় বলেও মন্তব্য করেন কমিশনের আইনজীবী৷

স্বাধীন, অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ পঞ্চায়েত ভোটের জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়ার জন্যও বিচারপতির কাছে কমিশনের আইনজীবী এ দিন ফের আর্জি জানান৷ তিনি বলেন, 'ভোটাররাও আদালতের দিকেই চেয়ে রয়েছেন৷ কী ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে এবং ক'দফায় ভোট হবে, সে ব্যাপারে আদালতই রাজ্যের মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিক৷' দফা কমলে নিরাপত্তায় বাড়তি বাহিনীর প্রয়োজন বলেও তিনি সওয়াল করেন৷ বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারও মন্তব্য করেন, পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ দিন নির্দিষ্ট না করলেও খুব শীঘ্রই রায় ঘোষণা হবে বলে জানিয়ে দেন বিচারপতি৷ শীঘ্র ভোটের জন্য আগামী কয়েক দিনের মধ্যে প্রথমে সংক্ষিন্ত রায় এবং পরে বিশদ রায় দেওয়া হতে পারে বলেও ইঙ্গিত মিলেছে বিচারপতির কথায়৷ তবে সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ে কোনও পক্ষ অসন্ত্তষ্ট হলে ডিভিশন বেঞ্চ এবং সুপ্রিম কোর্টেও মামলা গড়ানোর সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে৷ সে ক্ষেত্রে ভোটও আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা৷ 

কমিশনের সঙ্গে সরকারের আপস-রফার যে কোনও সম্ভাবনা নেই তার ইঙ্গিত স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীই দিয়েছেন বৃহস্পতিবার শ্যামবাজারে দলীয় জনসভায়৷ ওই সভায় নাম না করে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডেকে আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, পঞ্চায়েত ভোট পিছিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে৷ বর্তমান নির্বাচন কমিশনারের তিন বছরের মেয়াদ বাম আমলে বাড়িয়ে ছ'বছর করা নিয়েও ফের প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের পরের দিনই সরকারের খরচ-খরচা নিয়ে আদালতে কমিশন প্রশ্ন তোলায় বিবাদ গড়ানোর আশঙ্কাই বাড়ল৷ কমিশনের এ ধরনের প্রশ্ন তোলার এক্তিয়ার নিয়ে পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁর মন্তব্য, 'কখনও পারে না৷ কী করে কোর্ট শোনে, তা-ও বুঝতে পারি না৷ সরকার কোন খাতে কী খরচ করবে তা কমিশন ঠিক করবে নাকি! এ বার তো সরকারি কর্মচারীদের মাইনে দেওয়াটাকেও বলবে কম গুরুত্বপূর্ণ৷ এটা আসলে সব কিছু পিছিয়ে দেওয়া, গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা৷' 
পঞ্চায়েত ভোটের জন্য কমিশনের কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবি খারিজ করতে গিয়ে আর্থিক সংকটের প্রসঙ্গই আদালতে তুলে ধরেছিল সরকারপক্ষ৷ গত ২৫ এপ্রিল অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চ‌ট্টোপাধ্যায় তাঁর সওয়ালে দাবি করেন, ২০০৮-এ পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরেই নির্বাচনের খরচ দিয়েছিল রাজ্য সরকার৷ এ বার এখনও নির্বাচন কবে হবে ঠিক না হওয়া সত্ত্বেও সরকার ১০০ কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছে৷ তিনি বলেছিলেন, সরকারের আর্থিক সংকটের কথা সবারই জানা৷ অ্যাডভোকেট জেনারেলের সেই 'যুক্তি' খণ্ডন করতে গিয়েই শুক্রবার কমিশনের আইনীজীব বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশানুযায়ী, বেতন, পেনশন বা ভোটের মতো বিষয়ে সরকার কখনও বলতে পারে না, তার কাছে অর্থ নেই৷ তিনি প্রশ্ন তোলেন, সরকার যদি সিগারেটের উপর রাতারাতি ১০ শতাংশ কর বসিয়ে (সারদা-কাণ্ডের ক্ষতিপূরণে) ১৫০ কোটি টাকা তুলতে পারে, তা হলে ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের খরচ দিতে অসুবিধা কোথায়? বিচারপতিও মন্তব্য করেন, এই কারণেই তিনি এর আগে নির্বাচনী করের কথা বলেছিলেন৷ বিচারপতির বক্তব্য, বিভিন্ন দন্তরের জন্য যে ভাবে বাজেট বরাদ্দ হয়, সে রকমই ভোট-খাতে আলাদা বাজেট বরাদ্দ হওয়া উচিত৷

এ দিনও সমরাদিত্যবাবু বলেন, বুথ দখল রুখতে এবং মানুষ যেন নিজেদের ভোট নিজেরাই দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতেই বুথ-পিছু দু'জন করে নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন জরুরি৷ সরকার আদালতে পেশ করা হলফনামায় রাজ্য-পুলিশের যে সংখ্যা জানিয়েছে, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি৷ জঙ্গলমহলে যে ৩৪ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে, তা পঞ্চায়েত ভোটে মোতায়েন করা হবে বলে রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন৷ এই প্রসঙ্গে কমিশনের আইনজীবী আবার জঙ্গলমহলে মাওবাদী-মোকাবিলার কী হবে--সেই প্রশ্ন তুলেছেন৷ 


হলফনামায় উল্টো দাবি
লগ্নি সংস্থাদের দৌরাত্ম্য জানা ছিল বহু আগেই
য়লা বৈশাখের আগে রাজ্যে লগ্নি সংস্থাগুলির কাজকর্ম নিয়ে তাঁর কিছু জানা ছিল না বলে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ গত কয়েক দিন ধরেই অন্য কথা বলছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সেবি, আয়কর দফতর বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তারা জানাচ্ছিল, এই সব লগ্নি সংস্থা সম্পর্কে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরকে দফায় দফায় অবহিত করা হয়েছে। এ বার রাজ্য সরকার নিজেই হাইকোর্টে দাখিল করা হলফনামায় জানিয়ে দিল, রাজ্যে লগ্নি সংস্থার রমরমার বিষয়টি ২০১১ সালের মে মাসেই (অর্থাৎ তৃণমূল ক্ষমতায় আসার ঠিক পরে) জানতে পেরেছিল তারা। এবং সঙ্গে সঙ্গেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হয়েছিল। 
সারদা কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছেন এক আইনজীবী। সেই মামলায় রাজ্য সরকারকে হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। বৃহস্পতিবার হলফনামা জমা দেয় রাজ্য। তার ছয় নম্বর পাতায় লগ্নি সংস্থা নিয়ন্ত্রণে ২০০৯ সালে রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল (যা এই সে দিন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে পড়ে ছিল) সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলা হয়েছে: '২০১১ সালের মে মাসে ক্ষমতায় এসেই বর্তমান সরকার পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে রাজ্যের অর্থসচিবকে বিলটিতে দ্রুত ছাড়পত্র আদায় করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে নির্দেশ দেয়।... ২০১২-র অক্টোবরে রাজ্যে সক্রিয় চিট ফান্ডগুলির বেআইনি কাজকর্ম সম্পর্কে অর্থসচিবকে অবহিত করেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব। অর্থসচিবের নির্দেশে অর্থ দফতরের ইকনমিক অফেন্স ইনভেস্টিগেশন সেল কিছু তদন্তও করে...।' সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, লগ্নি সংস্থাগুলির কাজকর্ম সম্পর্কে রাজ্য সরকার যে মোটেই অন্ধকারে ছিল না, এই হলফনামাই তার প্রমাণ। 
রাজ্য সরকারের ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের কাছেও যে লগ্নি সংস্থাগুলির বেআইনি কাজ সম্পর্কে খবর ছিল, তা আগেই কবুল করেছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। বস্তুত, এই ধরনের সংস্থার ফলাও কারবারের কথা জানিয়ে ২০১১-র অগস্টেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে চিঠি পাঠিয়েছিলেন তিনি। চিঠির সঙ্গে ১৫টি লগ্নি সংস্থার নামের তালিকাও পাঠানো হয়েছিল। সেই চিঠির জবাবে কী ভাবে ওই সব সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা জানিয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কিন্তু রাজ্যের তরফে আর কিছুই করা হয়নি বলে অভিযোগ।

কমিশনের কার্যালয়ে লগ্নির কাগজপত্র জমা দিচ্ছেন
সারদার এজেন্ট ও আমানতকারীরা। —নিজস্ব চিত্র
আবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও দাবি করছে যে, রাজ্যে সক্রিয় লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে তা জানিয়ে ২০১১ সালের ২৫ অগস্ট প্রথম চিঠি দেন মন্ত্রকের যুগ্মসচিব কে কে পাঠক। ওই বছরের ২০ অক্টোবর দ্বিতীয় চিঠি দেন মন্ত্রকের ডেপুটি সেক্রেটারি কে মুরলীধরণ। এর পরেও বিষয়টি মনে করিয়ে চিঠি পাঠানো হয় ২০১১-র ১৬ ডিসেম্বর এবং ২০১২-র ২৪ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু কোনও চিঠিরই উত্তর দেয়নি রাজ্য। এই সব তথ্য এবং রাজ্য সরকারের হলফনামা লগ্নি সংস্থার কাজকর্ম বন্ধে গাফিলতির অভিযোগকেই পুষ্ট করল বলে আইনজীবীদের একাংশের মত। 
সারদা কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত চেয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা আইনজীবী বাসবী রায়চৌধুরীর অভিযোগ ছিল, রাজ্য সরকার দু'বছর ধরে গোটা বিষয়টি বসে বসে দেখেছে। ওই সব লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। সেই অভিযোগ নস্যাৎ করার জন্য হলফনামায় তৎপরতার যে বিবরণ রাজ্য সরকার দিয়েছে, তাতে মুখ্যমন্ত্রীর কিছু না-জানার দাবি অনেকটাই লঘু হয়ে গেল বলে মনে করা হচ্ছে। 
এ প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের এক প্রথম সারির নেতার মন্তব্য, "সারদা কাণ্ডের পরে রাজ্য সরকার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কিছু পদক্ষেপ করেছে। কিন্তু সরকারি তরফেই নানা অসংলগ্ন মন্তব্যের জন্য সাধারণ মানুষ আরও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন। এই ত্রুটি অবিলম্বে মেরামত করা দরকার।"
হলফনামায় বলা হয়েছে, ২০১২-র অক্টোবরে ইকনমিক অফেন্স ইনভেস্টিগেশন সেলের তদন্তে লগ্নি সংস্থাগুলি কী ভাবে মানুষকে ঠকাচ্ছে তা ধরা পড়ে। বোঝা যায়, ২০০৯ সালে যে বিল পাশ করা হয়েছিল, তা আরও কড়া করা প্রয়োজন। এর পরই কেন্দ্রের কাছ থেকে বিলটি ফেরত চাওয়া হয়। এই বক্তব্য যে কার্যত মুখ্যমন্ত্রীর দাবিরই বিরোধিতা করছে, সে কথা পরবর্তী শুনানিতে উল্লেখ করবেন বলে জানিয়েছেন জনস্বার্থ মামলাটির সঙ্গে যুক্ত একাধিক আইনজীবী।

* হাইকোর্টে পেশ করা রাজ্যের হলফনামার প্রতিলিপি
রাজ্য সরকারের একটি সূত্রের বক্তব্য, অর্থ দফতরের অধীনে যে ইকনমিক অফেন্স ইনভেস্টিগেশন সেল রয়েছে, সেটি কার্যত অকেজো। সেখানে হাতে গোনা কয়েক জন কর্মী রয়েছেন। তাঁরা কী ভাবে, কী তদন্ত করে রিপোর্ট দিলেন এবং সেটা কী ভাবেই বা হলফনামায় চলে এল, গোটাটাই বিস্ময়ের।
বস্তুত, শুধু আইনের দরবারে নয়, রাজনীতির ময়দানেও চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে বিভিন্ন সময়ে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন বক্তব্য। মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেছেন, "সেবি থেকে আরম্ভ করে কেন্দ্রের আর্থিক অপরাধ দমন শাখা ৬ মাস আগেই এই সব লগ্নি সংস্থা সম্পর্কে রাজ্যকে সতর্ক করেছিল। কিন্তু রাজ্য কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। বরং দেখছি, দেখব বলে ওই সব সংস্থার টাকা বিদেশে পাচার করার সুযোগ করে দিয়েছে।" 
এই নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এবং সিবিআই তদন্তের দাবি নস্যাৎ করাটাই যে হেতু আপাতত রাজ্য সরকারের মুখ্য উদ্দেশ্য, সে হেতু গত দু'বছরে লগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থার তালিকা হলফনামায় জোর পেয়েছে বলে আইনজীবী মহলের একাংশের মত। আর সেটা করতে গিয়েই খোদ মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যও মাথায় রাখা হয়নি। সারদা কাণ্ডের তদন্তভার কেন সিবিআই-কে দেওয়া উচিত নয় তা বোঝাতে গিয়ে হলফনামায় আরও বলা হয়েছে, প্রতারণার অভিযোগ পাওয়ার পরেই তদন্ত শুরু হয়েছে। মূল অভিযুক্ত গ্রেফতারও হয়েছেন। প্রাক্তন বিচারপতির নেতৃত্বাধীন কমিশন ও বিশেষ তদন্তকারী দল তদন্ত করছে। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে এবং নতুন আইনের বলে রাজ্য সরকার এই ধরনের ব্যবসা বন্ধ করতে সক্ষম হবে। এই পর্যায়ে তদন্তে কোনও গাফিলতি নেই। এখন সিবিআই-এর হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়াটা অপরিণত সিদ্ধান্ত হবে। 
শুক্রবার অবশ্য এই মামলায় রায় দেয়নি প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ। এ দিন শুনানির শুরুতেই আবেদনকারীর আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় আদালতকে জানান, রাজ্য সরকার বৃহস্পতিবার যে হলফনামা হাইকোর্টে জমা দিয়েছে তার প্রতিলিপি তাঁদের দেওয়া হয়নি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "মনে হচ্ছে রাজ্য সরকার মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি চাইছে না।" জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তি দেন, হাইকোর্ট ২ মে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিলেও অন্য পক্ষদের প্রতিলিপি জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়নি। সুব্রতবাবুর বক্তব্য, হলফনামা জমা দেওয়া হলে অন্যান্য পক্ষকে তার প্রতিলিপি দেওয়া একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এর জন্য হাইকোর্টকে নির্দেশ দিতে হয় না। এটা সরকার পক্ষের জানা উচিত। 
দেখা যায়, এই মামলায় যুক্ত অন্য কোনও পক্ষকেই রাজ্য হলফনামার প্রতিলিপি দেয়নি। ডিভিশন বেঞ্চ সব পক্ষকে প্রতিলিপি দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এ দিন আর মামলায় শুনানি হয়নি। আগামী বুধবার, ৮ মে পরবর্তী শুনানি হবে। তার আগে সব পক্ষকে হলফনামার প্রতিলিপি দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। 
হাইকোর্ট এ দিন মামলার রায় দেবে ধরে নিয়ে সিবিআই-এর পুলিশ সুপার আদালতে হাজির ছিলেন। সিবিআই সূত্রে বলা হয়, হাইকোর্ট নির্দেশ দিলে তারা এই তদন্তের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের না করলেও, অসমে তারা প্রাথমিক তদন্তের কাজ শুরুও করে দিয়েছে।

পুরনো খবর: 

No comments: