পাহাড় কেটে ব্যবসা নয়, হুঁশিয়ারি মিছিলে
Anandabazar Patrika
শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল, কাশীপুর, ১৬ জুন, ২০১৫
পঙ্কজের মত- আবার না সালওয়া জুডুম শুরু হয়!
পরিবেশ এবং জীবন-জীবিকা রক্ষায় পাহাড় কাটায় বাধা দিচ্ছেন গ্রামবাসী।
পুরুলিয়ার কাশীপুর ব্লকে সরকারি জমিতে থাকা 'পলসড়ার পাহাড়' কাটার কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা। তারই প্রতিবাদে সরব হয়ে পাহাড়টিকে রক্ষার ডাক দিয়ে সোমবার মিছিল করেন স্থানীয় আট-দশটি গ্রামের বাসিন্দারা। মিছিলে উল্লেখযোগ্য হারে মহিলাদের উপস্থিতি চোখে পড়েছে। পরে পাহাড়ের পাদদেশে সভা করে এলাকাবাসীর হুঁশিয়ারি, পাহাড় ধ্বংস হলে এক দিকে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে, অন্য দিকে তাঁদের জীবন-জীবিকায় টান পড়বে। ফলে, যে কোনও মূল্যে তাঁরা পাহাড় বাঁচাবেন। এই পরিস্থিতিতে পাহাড় কাটার কাজ বন্ধ রয়েছে।
পলসড়া মৌজায় বড়রা পঞ্চায়েতের ধনারডি গ্রামে ঢোকার ঠিক মুখে ৩-৫ একর জমির উপরে রয়েছে ওই পাহাড়। উচ্চতা ২০০-২৫০ ফুট। প্রশাসন সূত্রের খবর, 'ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেড'-এর (ডব্লিউবিএমডিটিসি) কাছ থেকে বরাত পেয়ে পাহাড় কেটে স্টোনচিপস তৈরির কাজ শুরু করেছে কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থা। বরাতের শর্ত অনুযায়ী, স্টোনচিপস তৈরি করে নিগমকে দেবে বেসরকারি সংস্থাটি। নিগম তা বাজারে বিক্রি করবে। পরিবর্তে সংস্থাটিকে নির্দিষ্ট অর্থ দেবে নিগম। গত মাসের শেষ থেকে পাহাড় কাটার কাজ শুরু করেছে সংস্থাটি। কিন্তু দিন তিনেক হওয়ার পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সোমবার থেকে ফের কাজ শুরুর কথা থাকলেও এ দিনই পাহাড় বাঁচাতে মিছিল, সভা হওয়ায় কাজ শুরু করেননি সংস্থার কর্মীরা।
পাহাড় রক্ষার ডাক দিয়ে এ দিন পথে নামেন বড়রা ও পাশের গৌরাঙ্গডি পঞ্চায়েতের ধনারডি, পাহাড়পুর, পলসড়া, মুরলু, আসনমনি, কচাগোদা, সুতাবই, বাস্তারডি গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ। ইতিমধ্যেই 'পাহাড় বাঁচাও কমিটি' গড়েছেন তাঁরা। এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ পাহাড়টি থেকে শ'তিনেক বাসিন্দা মিছিল করে পাহাড়পুর গ্রামে ডব্লিউবিএমডিটিসি-র অস্থায়ী ক্যাম্প-অফিস পর্যন্ত যান। তাঁদের হাতে ছিল পাহাড়, জঙ্গল, প্রকৃতি, পরিবেশ সংক্রান্ত প্ল্যাকার্ড।
কিছুদিন আগেই পাহাড় কাটার কাজ বন্ধ করার দাবিতে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ দফতরে স্মারকলিপি দিয়েছেন গ্রামগুলির বাসিন্দাদের একাংশ। জয়ধন মান্ডি, আনন্দ মান্ডি, প্রভাকর মুর্মু, অজয় বাস্কেরা বলেন, ''পাহাড়ের উপরে পাথর ফাটাতে বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। অথচ, অদূরেই রয়েছে স্কুল, আদিবাসী বস্তি। পাহাড়ের পাশ দিয়েই রাস্তা গিয়েছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি শোচনীয়।" তাঁদের ক্ষোভ, আস্ত একটি পাহাড় এ ভাবে কেটে লোপাট করে দেওয়ার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে সরকারি তরফেই।
এ দিন মিছিলে পা মেলানো আদিবাসী মহিলাদের অনেকে এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সদস্য। ঊর্মিলা হাঁসদা, গোলাপি মান্ডিদের আশঙ্কা, ''পাহাড়ের জঙ্গলের উপরে জ্বালানি-সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপরে নির্ভরশীল আমাদের পরিবার। পাহাড় ধ্বংস হলে জীবিকায় টান পড়বে। তা ছাড়া, পাহাড় কাটার ফলে পাহাড়ের নীচের ধানজমি ধুলোয় ভরে চাষের অযোগ্য হয়ে পড়বে।'' 'পাহাড় কাটা চলবে না' বলে তাঁদের এ দিনের হুঁশিয়ারি অনেককে ২০০৯-এ ওড়িশার নিয়মগিরি পাহাড় ঘিরে একই ধরনের আন্দোলনের কথা মনে পড়িয়ে দিয়েছে।
ডব্লিউবিএমডিটিসি-র স্থানীয় মাইনস ম্যানেজার শৌভিক দত্ত এ বিষয়ে মন্তব্য করেননি। শুধু জানিয়েছেন, বৈধ ভাবেই কাজ করছে ওই বেসরকারি সংস্থাটি। পাহাড়ের অদূরে ওই সংস্থাটির অস্থায়ী অফিস থাকলেও এ দিন সেখানে কারও দেখা মেলেনি। পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, ''ওই পাহাড় কেটে স্টোনচিপস তৈরির ক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।" প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন কলকাতায় ডব্লিউবিএমডিটিসি-র কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক সবুজবরণ সরকার। তিনি বলেন, ''ডব্লিউবিএমডিটিসি-র অফিসারেরা শীঘ্রই জেলায় এসে পরিস্থিতি সরেজমিন দেখবেন। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।''
No comments:
Post a Comment